ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকই ভরসা

শ্রীলঙ্কায় ওষুধ রফতানি আটকে আছে নিবন্ধন জটিলতায়

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

শ্রীলঙ্কায় ওষুধ রফতানি আটকে আছে নিবন্ধন জটিলতায়

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ নিবন্ধন জটিলতায় আটকে আছে শ্রীলঙ্কায় ওষুধ রফতানি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার যৌথ উদ্যোগে নার্স প্রশিক্ষণের বিষয়টিরও কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হচ্ছে না। ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিষয় দুটি নিয়ে আলোচনার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি)। এ ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ভরসা হচ্ছে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক। আগামীতে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি স্থগিত হয়ে যাওয়া জেইসি বৈঠক আগামী জুনের আগে হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছে ইআরডি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ইআরডিকে জানানো হয়েছে, ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। উভয় দেশের মন্ত্রী অতিদ্রুত ওষুধ রফতানি ও স্বল্প সময়ে নার্সদের প্রশিক্ষণে পাঠানোর জন্য কার্যকর উপায় বের করার লক্ষ্যে এমওইউ (সমঝোতা চুক্তি) স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৩ জুন প্রকিউরমেন্ট অব ফার্মাসিউটিক্যাল এ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইস বিটুইন বাংলাদেশ এ্যান্ড শ্রীলঙ্কা শিরোনামে একটি এমওইউ (সমঝোতা চুক্তি) স্বাক্ষরিত হয়। এর আলোকে শ্রীলঙ্কা একটি ওষুধের তালিকা বাংলাদেশে পাঠায়। কিন্তু বাংলাদেশ তালিকা অনুযায়ী ওষুধ রফতানি করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কায় ওষুধ নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতার সম্মুখীন হয়। শ্রীলঙ্কায় ওষুধ রফতানি প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ হওয়ায় বাংলাদেশ নিবন্ধন থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন জানায়। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে ওষুধ রফতানি প্রক্রিয়াও থেমে গেছে। অন্যদিকে ২০১৩ সালের নবেম্বর মাসে নার্সেস ট্রেনিং বিটুইন বাংলাদেশ এ্যান্ড শ্রীলঙ্কা শিরোনামে একটি এমওইউ (সমঝোতা চুক্তি) স্বাক্ষরিত হয়। এই এমওইউ (সমঝোতা চুক্তি) এর আওতায় একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের কথা থাকলেও সে প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। স্বাক্ষরিত এমওইউ-এর আলোকে ডিরেক্টরেট অব নার্সিং সার্ভিস বাংলাদেশ নার্সিং কোর্স কারিকুলাম, মেয়াদ, আবাসন ও খাদ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ৭ থেকে ৮ বার ই-মেইল পাঠিয়েও শ্রীলঙ্কা থেকে কোন জবাব পায়নি। ফলে এ বিষয়েও আর কোন অগ্রগতি হয়নি। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও এশিয়া ডেস্কের প্রধান আসিফ-উজ-জামান জনকণ্ঠকে জানান, শ্রীলঙ্কায় জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আগামী জুন মাসের আগে জেইসি অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কয়েকদিন আগে শ্রীলঙ্কা থেকে জানানো হয়েছে, নতুন বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে) এ বৈঠকের তারিখ জানানো হবে। সে হিসেবে জুনে জেইসি বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই বৈঠকে ওষুধ রফতানি ও নার্স প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কায় দুদিনব্যাপী যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকের কথা ছিল গত ১৭ ও ১৮ নবেম্বর। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) পঞ্চম সভার এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসেবে প্রস্তুতিও নিয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। পরবর্তীতে হঠাৎ করে এ বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, সার্কের সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব বিদ্যমান। সার্কের মাধ্যমে আঞ্চলিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে বদ্ধ পরিকর। এ দুটি দেশের মধ্যে ১৯৭৯ সালে সম্পাদিত এগ্রিমেন্ট অন ইকোনমিক এ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের আওতায় ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন গঠিত হয়। তখন থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চারটি যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনকে কাজে লাগিয়ে দুটি দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া শ্রীলঙ্কা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ প্রেক্ষাপটে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে এদেশ লাভবান হওয়ার কথা। এর আগে ২০১২ সালের ৭ ও ৮ মার্চ ঢাকায় অনু্িষ্ঠত হয়েছিল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা চতুর্থ জেইসি বৈঠক। এ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন বিষয়ে জানা যায়, চতুর্থ যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন সভার ফলোআপ হিসেবে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রেড গঠন করা হয়। এর প্রথম সভা গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এবং দ্বিতীয় সভা গত ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হয়।
×