ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

বিজয় দিবসে উৎসবের রঙে রঙিন সাংস্কৃতিক অঙ্গন

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

বিজয় দিবসে উৎসবের রঙে রঙিন সাংস্কৃতিক অঙ্গন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাগো ভাবনা কেন? আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি/তোমার ভয় নেই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। সোনালি রোদঝরা হেমন্তের সকালে এমন সুর ভেসে বেড়াল সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে। মঙ্গলবার বিজয় দিবসের সকাল থেকে শুরু হয়ে রাতঅবধি এভাবেই একাত্তরের স্মৃতিজাগানিয়া বীরত্বগাথা উচ্চারিত হয়েছে রাজধানীজুড়ে। বাঙালীর রাষ্ট্র বাংলাদেশের বিজয়ের ৪৩ বছর পূর্ণতার বর্ণিল উদ্্যাপনে মুখর হয়েছে কালের সাক্ষ্যবহ শহর ঢাকার সংস্কৃতি অঙ্গন। নৃত্য-গীত, কবিতা, বিশিষ্টজনের কথা কিংবা সেলুলয়েডের পর্দায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে বিজয়ের বন্দনা। নানা পরিবেশনার ভেতর নাগরিক হৃদয়ে বয়েছে প্রাণের স্পন্দন। রাজপথ থেকে অলিগলি পর্যন্ত উৎসবের রঙে রঙিন ছিল সাংস্কৃতিক অঙ্গন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিজয় উৎসব ॥ বিজয় দিবসের সকাল থেকে রাত অবধি নানা পরিবেশনায় মুখরিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিজয় উৎসব। হেমন্তের শেষ বেলার হাল্কা শীতে রোদ ছড়ানো ¯িœগ্ধ সকালে শুরু হয় দিবসের অনুষ্ঠানসূচী। সকালের পর্বটি ছিল শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় সাজানো। নাচ-গান-কবিতায় ক্ষুদে শিল্পীরা মাতিয়ে রাখেন প্রভাতী আয়োজনটি। ছোটদের সুরেলা উচ্চারণে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর দেশাত্মবোধক গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দনের শিল্পীরা। পরিবেশনার মাঝে ছোট বন্ধুদের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্যিক অধ্যায়ের গুরুত্ব তুলে ধরে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক ও আইটিআই সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। গান ও নাচের পরিবেশনায় অংশ নেয় কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের ক্ষুদে শিল্পীরা। সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে ‘এই রেল সেতু পার হয়ে’, ‘সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের শ্মশান করেছে কে’ ও ‘আমাদের নানা মতে নানা দলাদলি’ শীর্ষক তিনটি গান। এরপর ‘স্মৃতি ঝলমল সুনীল মাঠের কাছে’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় নৃত্য। আবৃত্তি পরিবেশন করে কল্পরেখার ক্ষুদে বাকশিল্পীরা। বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে গড়া ইউসেপ টুইটা বোট ফিল্ড স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনায়। নজরুল ইনস্টিটিউটের বিজয় উৎসব ॥ ডিসেম্বরের ১২ তারিখ থেকে শুরু নজরুল ইনস্টিটিউটের বিজয় উৎসব। মাঝে ১৫ তারিখ বাদ দিয়ে চার দিনব্যাপী উৎসবের শেষদিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে শুরু হয় দিনের কর্মসূচী। আর বিকেলে ধানম-ির কবি ভবনে আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ‘মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্যাম’ ॥ বিজয় দিবস উপলক্ষে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে ভিন্ন আয়োজনে মহাকাল শিরোনামে ‘মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্যাম’ শীর্ষক কোলাজ কোরিওগ্রাফি পরিবেশন করে। মীর জাহিদ হাসানের পরিকল্পনায়, আমিনুল আশরাফের নির্দেশনায় এবং ঠা-ু রায়হানের আলোক পরিকল্পনায় এ আয়োজনে ছিল মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশের গান, ডিএল রায়, নজরুল, রবীন্দ্র্রনাথ, লোকজ সঙ্গীত এবং সব শেষে জাতিকে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যওয়ার আহ্বানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ৪৫ মিনিট ব্যাপ্তির এ আয়োজন। মহাকালের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করে নান্দনিত এ আয়োজনে। এ কোলাজ কোরিওগ্রাফির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী। ঢাবি চলচ্চিত্র সংসদের বিজয় উৎসব ॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শিশু একাডেমির বিজয় উৎসব ॥ বাংলাদেশ শিশু একাডেমির উদ্যোগে এই প্রথমবারের মতো গত ১ ডিসেম্বর একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত জাতীয় পতাকা নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে শুরু হয় মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার বিজয় দিবসে শিশুদের দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
×