ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরের শুরুতে বিসিআইএম কানেকটিভিটি চুক্তি

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪

নতুন বছরের শুরুতে বিসিআইএম কানেকটিভিটি চুক্তি

এম শাহজাহান/তৌহিদুর রহমান ॥ বিসিআইএম কানেকটিভিটি কার্যকর করতে নতুন বছরের শুরুতে চার দেশের মধ্যে চুক্তি সই হবে। ইতোমধ্যে এই কানেকটিভিটির রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে বলে বাণিজমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন। কক্সবাজারে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারÑ এই চার দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে যৌথ সমীক্ষা বৈঠকের মাধ্যমে কানেকটিভিটির রূপরেখা কার্যকর হবে। বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার নিয়ে গঠন করা হয়েছে আঞ্চলিক ইকোনমিক করিডর। নতুন এ উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ধারণাটি ‘বাংলাদেশ-চায়না-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার’ (বিসিআইএম) নামেই অধিক পরিচিত। নতুন বছরের শুরুতে বিসিআইএম কানেকটিভিটি কার্যকর করতে এই চার দেশের মধ্যে চুক্তি সই করা হচ্ছে। এতে করিডরে অংশগ্রহণকারী চারটি দেশের মধ্যে বছরে ৪৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বাণিজ্যের ফলে বাংলাদেশ বছরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিসিআইএম ইকোনমিক করিডর রূপরেখা চূড়ান্ত করতে আজ বুধবার থেকে কক্সবাজারে যৌথ সমীক্ষা বৈঠক শুরু হচ্ছে। দু’দিনব্যাপী এই বৈঠকে বিসিআইএম সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। সেখানে বিসিআইএম নিয়ে প্রতিটি দেশের সমীক্ষা তুলে ধরা হবে। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বিসিআইএমের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, রফতানি বাজার সম্প্রসারণ, সার্বভৌম ও সমতার ভিত্তিতে আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক, পারস্পরিক সহযোগিতা উন্নয়ন অংশীদারিত্বকে সম্প্রসারিত করা এবং তার মাধ্যমে জাতীয় সমৃদ্ধি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরই বিসিআইএম গঠন ফোরামের বিষয়ে আলোচনা গতি পায়। সরকার আশা করছে, বিসিআইএম গঠনের মাধ্যমে চীন, ভারত ও মিয়ানমারের ইকোনমিক করিডরের উদ্যোগসমূহে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারবে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বিসিআইএম কানেকটিভিটির রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তারিখ বলা সম্ভব না হলেও নতুন বছরের শুরুতে বিসিআইএম কানেকটিভিটি কার্যকর হবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিসিআইএম দ্রুত কার্যকর করতে চীন, ভারত ও মিয়ানমারও যথেষ্ট আগ্রহী। এছাড়া এটি নিয়ে এই চার দেশের বিনিয়োগকারী ও শিল্পোদ্যোক্তাদেরও আগ্রহের শেষ নেই। তাই দ্রুত বিসিআইএম কার্যকর করা হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিসিআইএমের পাশাপাশি আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে সরকার ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও কানেকটিভিটি চুক্তি করবে। নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ভারতের সরাসরি কানেকটিভিটি থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে নেই। এ কারণে বাংলাদেশের পণ্য সামগ্রী নেপাল ও ভুটানে সরাসরি রফতানি হতে পারছে না। ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে যাতে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আমাদের কানেকটিভিটি হতে পারে সেলক্ষ্যে ট্রানজিট চুক্তি করার কথা ভাবছে সরকার। তিনি বলেন, ভিশন-২১ সামনে রেখে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। এটি করতে গেলে আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতেই হবে। আর এ কারণেই বিসিআইএমসহ ট্রানজিট চুক্তি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি শুধু এ অঞ্চলে নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যেও কানেকটিভিটি রয়েছে। পাকিস্তান-আফগানিস্তান ও ইউরোপে কানেকটিভিটি রয়েছে। তবে আমরা কেন কানেকটিভিটিতে যুক্ত হতে পারব না? তিনি বলেন, কানেকটিভিটি করতে না পারলে বাণিজ্য ততটা সম্প্রসারিত হবে না। কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে মিয়ানমার পর্যন্ত রাস্তা গেলে এটাকে আমরা করিডর বলব না। এটি হবে কানেকটিভিটি। আমরা সার্কভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে কানেকটিভিটি করতে চাই। চীন, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমারের সঙ্গে কানেকটিভিটি হলে আমাদের রফতানি বৃদ্ধি পাবে। এটি করার পরই আমরা আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করব। আজকের বৈঠকে প্রতিটি দেশের সমীক্ষা তুলে ধরা হবে। বিসিআইএম বৈঠকে প্রতিটি দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে ব্যবসা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য সুবিধা, বিদ্যুত সহযোগিতা, বহুমাত্রিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, টেকসই উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষ থেকে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। সূত্র মতে, বিসিআইএম কার্যকর করতে সদস্য দেশগুলো ইতোমধ্যেই সমীক্ষা শেষ করেছে। সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে কক্সবাজারে চার দেশের প্রতিনিধিদের এই বৈঠক হচ্ছে। এই বৈঠকের মাধ্যমেই চার দেশ বিসিআইএমের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। বিসিআইএম ইকোনমিক করিডর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সমীক্ষায় বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে কলকাতা থেকে কুনমিংয়ের মধ্যে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায় বাংলাদেশ। এছাড়া চারটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে পরিবহন ব্যবস্থা আরও উন্নত করার সুপারিশ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সড়ক পথের রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে রেল ও নৌপথের রুট এখনও চিহ্নিত করা হয়নি। সমীক্ষায় চার দেশের করিডর আওতাভুক্ত এলাকায় আঞ্চলিক অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এই করিডরের সঙ্গে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের উপযোগিতাকে সম্পৃক্ত করা হবে। বিসিআইএম প্রক্রিয়ায় চার দেশের পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা, ন্যায্য অংশীদারি ও পারস্পরিক স্বার্থের মূলনীতির ভিত্তিতে করিডর প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ সরকার। এ প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সমীক্ষায় চার দেশ বাস্তবসম্মত ও সহজে বাস্তবায়নযোগ্য যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গঠনের সুপারিশ করা হচ্ছে।
×