ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুই গুণী শিল্পীর অনবদ্য গান

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

দুই গুণী শিল্পীর অনবদ্য গান

ভারতের এই দুই গুণী সঙ্গীতশিল্পীর বাংলাদেশে প্রথম গানের অনুষ্ঠান করা। এদের একজন সুবিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুবিনয় রায়ের পুত্র সুরঞ্জন রায়, অপরজন পশ্চিমবঙ্গ এবং প্রবাসী বাঙালী সমাজে সুপরিচিত শিল্পী অলক রায় চৌধুরী। প্রথম অনুষ্ঠানটি হলো ধানম-িতে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রতিষ্ঠান ‘রবিরাগ’-এর সভাপতি আমিনা আহমেদের বাসভবনে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী কাঁটায় কাঁটায় শুক্রবার সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠানটি শুরু করে দেয়া হয়। শুরুতে অবশ্য রবিরাগেরই দু’জন শিল্পী গোলাম হায়দার ও আমিনা আহমেদ গান শোনান। এরপর মঞ্চে আসেন সুরঞ্জন রায়। ওইদিন ছিল শিল্পীর জন্মদিন। তাই সূচনায় পুষ্পবরণ চলল বেশ খানিকক্ষণ ধরে। বেশ বিনয়ী ও সুরসিক মনে হলো সুবিনয়পুত্রকে। ঘরোয়া আসরের মেজাজে বললেন, আমার পাঞ্জাবির কারুকাজের প্রশংসা করছিলেন একজন এখানে। আমি বললাম, গলায় তো কারুকাজ পাবেন না, সব ওই পাঞ্জাবিতেই আছে। গান শুরু করলে বোঝা গেল সুরঞ্জন কী সুন্দরভাবেই না রাঙ্গিয়ে দিতে পারেন গোটা সন্ধ্যা। চোখ বুজে শুনলে মনে হচ্ছিল স্বয়ং সুবিনয় রায়ই গাইছেন। জিনসূত্রে এটা হওয়াটা অস্বাভাবিক মনে হবে না কণ্ঠস্বরের ক্ষেত্রে। কিন্তু গায়কীর বেলা? স্বর লাগানোর ভঙ্গি! পিতা ছিলেন তাঁর প্রধান সঙ্গীতগুরুÑ এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। আর বিশেষ উচ্চতায় তাঁর অবস্থান না হলে কি বিশ্বভারতীতে এক্সামিনার হওয়া সম্ভব? শুরু করলেন তিনি ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’। সত্যি বলতে কি সুরঞ্জন এমন সব গান নির্বাচন করেছিলেন যেগুলো তাঁর বাবা সুবিনয় রায়ের খুব পছন্দের ছিল এবং সেগুলো তিনি বারবার গেয়েছেন। ফলে তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী, অধরা মাধুরি, হৃদয় নন্দনবনে, শেষ বেলাকার শেষের গানে ভোরের বেলা বেদন আনেÑ সুবিনয় রায়ের এইসব ‘ট্রেডমার্ক গান’ তাঁর পুত্রের কণ্ঠে আরও বেশি করে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। স্বাভাবিকভাবেই তুলনাটাও চলে আসছিল। যেসব শ্রোতার পক্ষে সুবিনয় রায়ের গান সামনাসামনি বসে শোনার সৌভাগ্য হয়নি তাঁদের জন্যে সুরঞ্জন রায়ের গান শুনে প্রয়াত শিল্পীকে স্মরণ ও শ্রদ্ধানিবেদনের একটি উপলক্ষ হয়ে উঠেছিল ওই মেহফিল। অলক রায় চৌধুরী শতভাগ পেশাদার শিল্পী। বিচিত্র ধরনের গান করে থাকেন। জগন্ময় মিত্র, শ্যামল মিত্র, পিন্টু ভট্টাচার্য, মান্না দে সবার গান তাঁর কণ্ঠস্থ। যদিও রবীন্দ্রসঙ্গীতেই তাঁর বিশেষ পারদর্শিতা। বিনয় করেই বললেন, সুরঞ্জনদা এই আসরে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে এমন একটি উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে আমি অন্য গানই গাইছি। তবে শেষ করব একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। শুরু করেছিলেন ‘কাজল নদীর জলে ভরা ঢেউ ছলোছলে’ দিয়ে, মাঝে ‘পৃথিবী আমারে চায়’সহ একগুচ্ছ চিরকালীন গান এবং কিছু হাসির গান শুনিয়ে শেষ করলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আসা যাওয়ার পথের ধারে’ গেয়ে। একটানা দেড় ঘণ্টার বেশিই হবে। কিন্তু শ্রোতাদের চাওয়া যেন শেষ হচ্ছে না। অলক রায় চৌধুরীর গান মনপ্রাণ দিয়ে শুনবার মতো তো বটেই, বাড়তি পাওনা হচ্ছে প্রতিটি গানের ইতিহাস প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরার বিরল ক্ষমতার স্বাদগ্রহণ। আবহমান বাংলা গানের ধারা সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান এবং মোহমুগ্ধ ভালোবাসা নিয়ে গান করেন বলেই তাঁর গান শুনে এত আনন্দ লাভ করা যায়। ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪
×