ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেন রুবেল, হ্যাপী চান বিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেন রুবেল, হ্যাপী চান বিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্রিকেট ও চলচ্চিত্রের দুই সেলিব্রিটির মামলা শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়াল। রাজধানীর মিরপুর থানায় অভিনেত্রী হ্যাপির দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেন। সোমবার বিকেলে শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মোঃ আকরাম হোসেন চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। রুবেলের পক্ষে জামিনের আবেদন ও এ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন তার আইনজীবী স ম রেজাউল করিম। এ সময় দ্রুত আদালত ত্যাগের পূর্ব মুহূর্তে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলে রুবেল কোন কথা বলেননি। তবে আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান-দু’একদিনের মধ্যে রুবেল সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তার যা বলার, বলবেন। এদিকে গতকালও অভিনেত্রী হ্যাপি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মামলামোকদ্দমা করার পরও তিনি এখনও রুবেলকে ভালবাসেন। বিয়ের মাধ্যমে এ ভালবাসার চূড়ান্ত পরিণতি দেখতে চান তিনি। এ জন্য যা দরকার তাই করবেন। তবে রুবেলকে এখনও ভালবাসার দাবি করলেও হ্যাপি ঠিকই সাংবাদিকদের কাছে রুবেলের বিরুদ্ধে একতরফা বিষোদগার করে চলছেন। বেশ সুস্পষ্ট কণ্ঠেই বলেছেন-রুবেলের ফ্ল্যাটে আরও অনেক মেয়ে আসত। তারা দিনরাত তার সঙ্গে কাটাত। তখন রুবেল কি করত ওদের সঙ্গে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হ্যাপির মুখে এ ধরনের কথাবার্তায় সোমবার রুবেলের এক ভক্ত আদালতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের কাছে তার উষ্মা প্রকাশ করেন, “ও মুখে আর ভালবাসার কথা মানায় না। ভালবাসার দোহাই দিয়ে হ্যাপি যেভাবে একতরফা রুবেলের চরিত্র হনন করছেন সেটা কি এ যুগের কোন প্রেমিক-প্রেমিকা মানবে? বিশ্বাস করবে? হ্যাপি যদি সত্যিই তাকে ভালবেসে থাকে তাহলে সে কি করে দৌড়ে থানায় গিয়ে মামলা ঠুকে দিতে পারল? মামলা দিয়ে দুনিয়ার কোথায় ভালবাসার অধিকার আদায় বা মর্যাদা রক্ষা করা যায়? রুবেল না হয় মানমর্যাদার কথা চিন্তা করে এ বিষয় নিয়ে আপাতত প্রেস মিডিয়া এড়িয়ে চলছেন। হতে পারে এটা তার একটা কৌশল। এ সুযোগে হ্যাপি যা ইচ্ছে তাই বলছেন,আর মিডিয়াও তাই লুফে নিচ্ছে। দুদিন পর যদি রুবেলও সাংবাদিকদের সামনে হ্যাপির জীবনের সব কেলেঙ্কারি ফাঁস করে তখন কেমন লাগবে তার? হ্যাপি রুবেলের এ কেলেঙ্কারি মামলামোকদ্দমা নিয়ে গতকালও মুখ খুলেননি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। চলচ্চিত্র অঙ্গনেরও কোন দায়িত্বশীল সূত্র এ নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। দুই জগতের বাসিন্দারাই এ ক্ষেত্রে আইন-আদালত, থানা-পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্তের দিকে চেয়ে আছেন। এই যখন বাস্তব অবস্থা তখন হ্যাপি সোমবারও সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। যে সাংবাদিক যা জানতে চায় তাকেই তা বলছেন। যদিও তার একতরফা বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রুবেলের অভিভাবক, স্বজন, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীরা। সোমবারও হ্যাপি কয়েক সাংবাদিককে বলেন, তিনি এখনও রুবেলকে ভালবাসেন। যদিও রুবেলের ফ্ল্যাটে আরও মেয়ে যাওয়া-আসা করত। এটা তিনি বুঝতে পেরে রুবেলকে এড়িয়ে চলা শুরু করেন। কিন্তু রুবেল তার কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করে ক্ষমা চান। হ্যাপি বলেন, রুবেলকে আমি বলেছিলাম, তুমি তোমার মতো থাক। তোমার এ ধরনের আচরণ আমি মেনে নিতে পারব না। তারপর একদিন আমার রিকশা থামিয়ে, রিকশাওয়ালাকে নামিয়ে ও নিজে রিকশা চালায়। আমার রাগ ভাঙায়। আমাকে আবার ফিরে আসতে বলে। তখন আমার প্রতি ওর ভালবাসা দেখে আমি মনে করি, হয়ত এবার থেকে আর ওসব করবে না। ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু ও ভাল হয়নি। হ্যাপি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ও আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় অনেক কান্নাকাটি করত। আমার পেছনে যে কত ঘুরেছে তার ইয়ত্তা নেই। অথচ এখন সব অস্বীকার করছে। হ্যাপি থামেন না। একনাগাড়ে বলতে থাকেন, অনেকে বলছেন, আমি নাকি মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হতে এসব করছি। আমার প্রশ্ন, নিজের সম্মান নষ্ট করে কি কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে চায়? আপনাদের সম্পর্ক বাংলাদেশ টিমের আর কেউ জানতেন কিনা?-এমন প্রশ্নের জবাবে হ্যাপি বলেন-সাকিব, মাশরাফি ভাই জানতেন। ওনারা রুবেলকে অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু ও কারও কথা শোনেনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে হ্যাপি বলেন, গত ৪ নবেম্বর আমি ওর ফ্ল্যাটে গেলে ও আমাকে অনেক মারধর করে। আমি মামলা করার সিদ্ধান্ত নেই। তখন মাশরাফি, সাকিব ভাইরা আমাকে মামলা না করতে অনুরোধ করেন। আমি ওনাদের কথায় ভরসা রাখি। কিন্তু রুবেল তাতেও পথে আসেনি। মাশরাফি ভাই ওকে অনেক বুঝিয়েছেন। বলেছেন, প্রেম করেছ এখন বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়। মেয়েটি তো কোন দোষ করেনি। বিয়ে করলে মামলা তুলে নেয়ার শর্ত প্রসঙ্গে হ্যাপি বলেন, রুবেলকে আমি খুব ভালবাসি। আমি ওকে এখনও জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাই। সমঝোতা হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ও আমাকে বিয়ে করলেই মামলা তুলে নেয়া হবে। আর বিয়ে না করলে একজন নারীকে প্রতারণার শাস্তি তাকে পেতেই হবে। মামলার আইনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে হ্যাপির। রুবেলের সঙ্গে বছরখানেকের সম্পর্কের অনেক প্রমাণ তার কাছে আছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। ডাক্তারি পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিজের সৎ সাহস আছে বলেই এমন বিব্রতকর একটি পরীক্ষা করতৈ হয়েছে। কারণ সত্য উদঘাটনে এটা দরকার। তা হলে তার সঙ্গে আমার সম্পর্কের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এদিকে মিরপুর থানায় দায়েরকৃত মামলা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে পুলিশ জানায়, এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। মামলা হয়েছে বলেই যা ইচ্ছা তাই করা যাবে না। অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। শত হলেও রুবেল, রুবেল জাতীয় ক্রিকেটার। তার পালানোর কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া তাকে গ্রেফতার করতে হলে অভিযোগ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। উল্লেখ্য, গত শনিবার হঠাৎ মিরপুর থানায় হাজির হয়ে মামলা দায়ের করেন চিত্রনায়িকা নাজনিন আক্তার হ্যাপি। এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, ফেসবুকের মাধ্যমে একজন ক্রিকেটার হিসেবে রুবেলের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। তারপর ঘনিষ্ঠতা। এক পর্যায়ে বিয়ের আশ্বাসে রুবেল তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। কিন্তু বার বার বাদী বিয়ের প্রস্তাব দিলেও আসামি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ জন্যই সুবিচার চেয়ে এ মামলা। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে রুবেলের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
×