ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের মরণ কামড়

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

শীতের মরণ কামড়

আকস্মিকভাবে সারাদেশে প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতকালে শীত পড়বে, রাতগুলো হয়ে উঠবে হিমজর্জর- এটা স্বাভাবিক। তবে পৌষ না আসতেই মধ্য অগ্রহায়ণের কনকনে ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে জনজীবন- এটাও প্রত্যাশিত নয়। অগ্রহায়ণের এই সময়টায় (ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে) অসহনীয় শীতের প্রকোপ এটাই জানিয়ে দিচ্ছে যে জলবায়ু বদলে গেছে। তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এখন এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ারই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে মানুষকে। শীত বলে কয়ে আসবে না, তাই পঞ্জিকার দিকে একটি চোখ রেখে আগাম শীতের ব্যবস্থা নিয়ে রাখা সমীচীন। কিন্তু এ প্রস্তুতি গ্রহণের জন্যে চাই অর্থ স্বাচ্ছন্দ্য। দেশের অধিকাংশ মানুষ যেখানে দরিদ্র সেখানে এসব পূর্বাভাস ও সতর্কতার কথা উপহাসেরই নামান্তর বলে মনে হতে পারে। এই আকস্মিক ঠাণ্ডায় রাজধানীতে শীতের গরম কাপড় বিক্রির ধুম লেগে যাওয়ার খবর কাগজে ছাপা হয়েছে। শীত তো কেবল গরম কাপড়ের দাবি নিয়ে আসে না, তার আগমন বহুজনের কাছেই দুর্যোগ তুল্য হয়ে ওঠে। শীত জানিয়ে দেয় মাথার ওপর ছাদ নেই এমন জায়গায় রাত্রিবাস করা স্বাস্থ্যের জন্যে বিপজ্জনক। আর হুটহাট ফুটপাথে, খোলামেলা কোন পাবলিক প্লেসে, এমনকি ঘরের ভেতরেও মেঝেতে শোয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। চার দেয়ালের ভেতর রাত্রি যাপনের ব্যাপারেও শীত নির্দেশনা দেয়। কিন্তু শতকরা কত ভাগ মানুষের পক্ষে শীতের ওই শর্তগুলো পালন করা সম্ভব? এখনও দেশের সিংহভাগ দরিদ্র মানুষের কাছে উদরের ক্ষুধা নিবারণই মোক্ষম কথা। কনকনে শীত যে তার শরীরের উষ্ণতা শুষে নিয়ে তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারেÑ এটা অনেকের মাথাতেই আসে না। শীতে যে রোগগুলো সাধারণভাবে আক্রমণ করে তার ভেতর রয়েছে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস। জ্বরে ভোগেন বহু মানুষ। যাদের এ্যাজমা আছে তাদের মন্দ সময় শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় শিশু ও বৃদ্ধরা। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া, বয়স্কদের বাতের ব্যথার কষ্ট বহুলাংশে বেড়ে যায় শীতেই। শনিবার জনকণ্ঠের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, হঠাৎ করেই ঠাণ্ডাজনিত রোগ বেড়ে গেছে রাজধানীতে। গোটা দেশের অবস্থা ভিন্ন নয়। শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানোর বিষয়টি আপ্তবাক্যের মতো শোনালেও এর বিকল্প নেই। সংবাদপত্র কেবল আহ্বান জানিয়েই তার দায়িত্ব সারে না, রীতিমতো দল গঠন করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রম হাতে নেয়। সমাজে বিত্তবান মানুষ, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীর কাছে দুস্থ মানুষের প্রত্যাশা থাকে বেশি। দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ঐতিহ্য রয়েছে এ দেশে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা অনেক সময় আত্মশ্লাঘা অনুভব করি। বস্ত্র খাতে আমাদের উপার্জন বিশ্বে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। কিন্তু শীতের মতো স্বাভাবিক ঋতু বদলের ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হবে কেন? শীতকাল কেন হবে বিভীষিকা! আজকের এই বিশ্বে একজন মানুষও যদি না খেয়ে থাকে তবে তা সমগ্র মানব জাতিরই দায়। একইভাবে শীত যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়ে জবুথবু মানুষের জীবন স্থবিরতার শিকার হলে তার দায় সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর এসে পড়তে বাধ্য। সরকারের এ ব্যাপারে অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তহবিল গঠন ছাড়াও একেবারে নতুন করে উদ্যোগ নেয়ার এখনই সময়। শীতের মরণ কামড় থেকে সবার রক্ষা পেতেই হবে।
×