ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌষের সঙ্গে পার্বণ শব্দটির খুব সখ্য। বাংলা এই মাসের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসব অনুষ্ঠান আর মাসের শেষ দিন উদ্যাপিত হয় বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী উৎসব পৌষসংক্রান্তি। গোটা দেশ মাতে অসাম্প্রদায়িক উৎসবে। নানা আয়োজনে শহরে-গ্রামে এ উৎসব উদ্যাপন করা হয়। পৌষসংক্রান্তিকে পৌষ-পার্বণ বা মকরসংক্রান্তিও বলা হয়ে থাকে। এটি মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি ক্ষণ। মকরসংক্রান্তি বলতে, নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশের ক্ষণটিকে ইঙ্গিত করা হয়। পৌষসংক্রান্তির পৌষ-পার্বণ মূলত পিঠা-খাওয়ার উৎসব। এ সময় ঘরে ঘরে পিঠাপুলি হয়। বহুকাল ধরে চলা আচার অনুষ্ঠানেও পিঠাপুলির ব্যবস্থা থাকে। গ্রীষ্মকালে পিঠাপুলি অত রুচিকর হয় না। এ কারণে শীতকালে বেশি আয়োজন করা হয়। বছরের বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত পিঠা উৎসবের মধ্যে পৌষসংক্রান্তি বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছে। লোকজ সংস্কৃতির গবেষকদের মতে, মকরসংক্রান্তি বা উত্তরায়ণসংক্রান্তির দিন প্রাচীন হিন্দুরা পিতৃপুরুষ ও বাস্তুদেবতার জন্য তিল কিংবা খেজুর গুড় দিয়ে তিলুয়া তৈরি করতেন। নতুন চালে তৈরি পিঠার অর্ঘ্য দান করতেন। এই কারণে পৌষসংক্রান্তির অপর নাম তিলুয়াসংক্রান্তি বা পিঠাসংক্রান্তি। পৌষসংক্রান্তির দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে বাস্তুপূজা অনুষ্ঠিত হয়। চলে গৃহদেবতার নবান্নের অনুষ্ঠান। একইদিন দধিসংক্রান্তির ব্রতের শুরু হয়। এই ব্রতে প্রতি সংক্রান্তিতে লক্ষ্মীনারায়ণকে দধি দ্বারা স্নান করিয়ে ব্রাহ্মণকে দধি ও ভোজদান করা হয়। এ দিন বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু-কিশোররা বাস্তুর গান, কুলাইর ছড়া, হোলবোলের গান, বাঘাইর বয়াত গেয়ে চাল ও অর্থ সংগ্রহ করে পৌষপালা, বনভোজন ইত্যাদির আয়োজন করে। লোকজ সংস্কৃতি নিয়ে নিয়মিতই কাজ করেন লেখক যতীন সরকার। তিনি বলেন, কারও কারও মনে হতে পারে, পৌষসংক্রান্তি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বৈ কিছু নয়। বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। আবহমান কাল থেকেই বাংলায় ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ নীতি। ফলে পৌষসংক্রান্তিও বাঙালীর প্রতি ঘরে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। অবশ্য এখন অনেক কিছুই আগের মতো নেই। হয় না। প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে উৎসবে কিছু যোগ করেছেন। কিছু বিয়োগ। এভাবে স্বতন্ত্র মাত্রা পায় পৌষসংক্রান্তি। অনেকে আবার পৌষের শেষ দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না। বরং পৌষজুড়েই নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন চলে। এ সময় গ্রামের ঘরে ঘরে তৈরি হয় ভাপা, পাটিসাপটা, সন্দেশ, দুধ চিতই, মুগ পুলি, ছিট পিঠা। মায়েরা মেয়েরা রাত জেগে পিঠার গায়ে অলঙ্করণ করেন। ফুল লতাপাতা, পাখি, মাছের চোখ আঁকেন। এভাবে গোটা রাত পার হয়ে যায়। একদিকে চুলো থেকে পিঠা ওঠে। অন্য দিকে চলে গরম গরম খাওয়া। মায়ের হাতে তৈরি এসব পিঠার স্বাদ বরাবরই বেশি। আত্মীয়স্বজনদেরও নিমন্ত্রণ করে বাড়ি এনে পিঠা খাওয়ানো হয়।
×