ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চবিতে ফের ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ ॥ প্রাণ গেল এক ছাত্রের

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

চবিতে ফের ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ ॥ প্রাণ গেল এক ছাত্রের

চবি সংবাদদাতা ॥ খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রুপিং ও কোন্দলের ‘অবসান ঘটানোর’ পরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে রবিবার ফের সংঘর্ষ হয়েছে। এক পক্ষের গুলিতে ঝরে গেছে অপর পক্ষের তরতাজা আরও একটি প্রাণ। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে ৪ জন। নিহত ছাত্রের নাম তাপস সরকার (২০)। সে বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। থাকত আমানত হলে। তার বাড়ি সুনামগঞ্জে। বেড়ে উঠা নেত্রকোনায়। ঘটনার পর চমেক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলেই তার মৃতদেহ নিজ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে নিয়ে যায় তার সতীর্থরা। আহত ৪ জনের মধ্যে রয়েছেন চবি ছাত্রলীগের সাবেক মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এসএম আলাউদ্দিন আলম, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের আল-আমীন রিমন, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের সাব্বির হোসেন, আরেকজনের নাম জানা যায়নি। শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত শাহজালাল হলে তল্লাশি চালিয়ে ৩৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক সবাই ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স-এর কর্মী। নাশকতা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রবিবার ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। এদিকে, রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রবিবার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চবি বুদ্ধিজীবী চত্বরে জড়ো হয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় বুদ্ধিজীবী চত্বরে ফুল দেয়া নিয়ে ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক সংগঠন সিএফসি (চ্যুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার) ও ভিএক্স (ভার্সিটি এক্সপ্রেস)-এর কর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শাহ আমানত হলের সামনে ফের বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়ে উভয় গ্রুপের কর্মীরা। এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে সিএফসি কর্মী তাপস সরকার গুলিবিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চবি মেডিক্যাল সেন্টার ও পরে চমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহত তাপস সরকার সুনামগঞ্জের বাবুল সরকারের সন্তান। ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্র নিহতের ঘটনায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে রবিবার সন্ধ্যা ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরী বৈঠক আহ্বান করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল। এ ব্যাপারে বগিভিত্তিক সিএফসি গ্রুপের নেতা ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি অমিত কুমার বসু ও যুগ্ম-সম্পাদক সুমন মামুন জানান, ‘চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেনের পরিকল্পনায় এবং জালাল আহমেদ, এসএম আরিফুল ইসলাম ও রূপম বিশ্বাসের নির্দেশে এ হামলা হয়। এতে আশরাফুজ্জামান আশা, শাহরিদ শুভ, রুবেল দে, এনামুল হাসান অভি সরাসরি হামলায় অংশ নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে এবং আমাদের কর্মী তাপসকে হত্যা করে।’ ছাত্রলীগের ভিএক্স গ্রুপের নেতা রাশেদ হোছাইন বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোনো গুলি ছোড়া হয়নি। বরং সিএফসি নেতারাই আমানত হলের বিভিন্ন ফ্লোর থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় তাদের ছোড়া গুলিতে হলের নিচে থাকা তাদের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।’ অস্ত্র উদ্ধার ॥ সংঘর্ষের পর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত শাহজালাল হলে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ হলের বিভিন্ন কক্ষে অভিযান চালিয়ে ২টি পিস্তল, ৫টি বুলেট, প্রায় ২৫টি কিরিচ ও রামদা উদ্ধার করে। ভিএক্স গ্রুপের কর্মীরা এই হলটিতে অবস্থান করত। এরপর সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শাহ আমানত হলে অভিযান শুরুর প্রস্তুতি চলছিল পুলিশের। তদন্ত কমিটি ॥ রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ঘটনার তদন্তে অধ্যাপক খান তৌহিদ ওসমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
×