ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন ৪৩তম অবস্থানে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন ৪৩তম অবস্থানে

ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৩তম স্থানে অবস্থান করছে। গত কয়েক বছর আগেও অবস্থান অনেক নিচে ছিল। একইভাবে আউটসোর্সিংয়ের দিক থেকেও দেশের অবস্থান র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক ওপরে উঠে এসেছে। ঘরে বসেই আয়ের উৎস তৈরি হয়েছে। শহর থেকে গ্রাম সবখান থেকেই বিশ্ব এখন ছোট হয়ে আসছে। এমন অগ্রগতি দেশের মানুষকেও গতি দিয়েছে। সরকারের এ সাফল্যের স্বীকৃতি গোটা বিশ্ব দিচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে দারিদ্র্যের অবসান, মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, সবার জন্য স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তিতে সর্বজনীন প্রবেশ নিশ্চিত হবে। আইসিটি এসব অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। আইসিটি (তথ্যপ্রযুক্তি) দ্রুত বদলে দিচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। সৃষ্টি করছে দূরত্ব হ্রাস। সীমানাহীন তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সুযোগ-সুবিধা। তথ্যপ্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গোটা জাতিকে নিয়ে যাবে উন্নত দেশের কাতারে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আইসিটিকে আজ এশিয়ার দেশগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ এই সেক্টর নিয়ে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে নানা ধরনের কাজ শুরু করে বেশ আগে থেকেই। আইসিটি এখন মানুষের অধিকারের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। সরকার প্রথম মেয়াদে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করে। দ্বিতীয় মেয়াদে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছে, মানুষ যাতে ঘরে বসে সব ধরনের সেবা পেতে পারে। স্কুল-কলেজে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করে ছাত্রছাত্রী গড়ে তোলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়, ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ই-গবর্নেন্সের আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম জনকণ্ঠকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার নীতিনির্ধারণী কাজ শেষ করেছে। অনেক কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি কাজ বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ পর্যাপ্ত রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পুরোপুরি না হলেও বেশির ভাগ মানুষ আইসিটির আওতায় চলে আসবে। আইসিটি সেক্টরটি একটি বড় সেক্টর। এখানে কাজের কোন শেষ নেই। তবে সরকার আইসিটির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। ভিশন ২১ এর আগেই আইসিটি সেক্টরে বিরাট কাজ হয়ে যাবে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত আন্তরিক অবস্থানেই রয়েছে। আগে সরকারী বিভিন্ন দফতরকে ডিজিটাইজড করতে হবে। মানুষ যাতে ঘরে বসে সার্ভিস পেতে পারেন। সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে চললে দেশের দুর্নীতি বহু গুণে কমে যাবে। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়, পোস্ট অফিস, চট্টগ্রাম বন্দর, স্কুল কলেজে কম্পিউটার ল্যাব বসেছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দফতর ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিগুলো সরকারের এ সব উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তবে মুশকিল হচ্ছে সরকার আন্তরিক হলেও আমলাদের এই কাজে আগ্রহ কম। কারণ ডিজিটাল হলে তাদের দুর্নীতি কমে যাবে। তখন আর ফাইল আটকে রাখতে পারবে না। যে ফাইল ১৪ টেবিল ঘুরে আসতে হয় সেই ফাইল তখন দু’তিনটি টেবিল থেকেই শেষ হবে। তারা ডিজিটাল পদ্ধতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এজন্যই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটও তারা আপগ্রেড করেন না। ডিজিটাল পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে সরকারী কর্মকর্তাদের কর্ম দক্ষতা বাড়বে। প্রশাসনে কাজের গতি আসবে। প্রশাসন স্বচ্ছ হবে। তাছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাগজ এবং অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজন হয়, কম্পিউটারে কাজ করলে এসব অপচয় থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। এদিকে সরকারী ওয়েবসাইটগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। একদিকে নিম্নমানের ওয়েবসাইট অন্যদিকে এসব ওয়েবসাইটে কোন তথ্যই আপগ্রেড করা হয় না। বাংলাদেশের যে ওয়েবসাইটটি রয়েছে তার অবস্থা আরও বেহাল। এখানে আপগ্রেড তথ্যের মধ্যে রয়েছে সরকারের মন্ত্রীদের নাম। বাকি সব তথ্য বহু পুরনো। এই ওয়েবসাইটটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত হয়। সরকার যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায় সেজন্য সরকারী অফিস-আদালতের ওয়েবসাইটগুলো আপগ্রেড থাকা প্রয়োজন। তা না হলে জনগণের তথ্য জানার বিষয়টি অন্ধকারেই থেকে যাবে। মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। গত কয়েক বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজটি বহুদূর এগিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, প্রতিটি ইউনিয়নে এখন মিনি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যে কোন মানুষ এখান থেকে যে কোন ধরনের সেবা নিতে পারবেন। তরুণ প্রজন্মকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার গতি অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, আগামী এক দশকের মধ্যে বিশ্বে আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তির সংখ্যা বর্তমান জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ হবে। ঘরে বসে আয়ের পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীল ও আপন পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শনের সাহায্যে টাকা আয়ের মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ারকে বিকশিত করা যায়। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক ভাল কাজ করা যায়। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এসব মার্কেটপ্লেসের মধ্যে রয়েছে মুক্ত পেশাজীবীদের কাজের সুযোগ। এখানে কাজ করে যে কেউ সফল হতে পারেন। বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের অনেক কাজই এখন বাইরের প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলারের আউটসোর্সিং করছে। শুধুমাত্র ইল্যান্স-ওডেক্স মার্কেট প্লেসে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাজ রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে ৪২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্টাফিং মার্কেট রয়েছে যার মাত্র ১০ শতাংশেরও কম অনলাইন মার্কেটে এসেছে। সময় এসেছে আউটসোর্সিংসহ অনলাইনভিত্তিক কাজের দ্রুত প্রসার ঘটানো এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের স্টাফিংয়ের বাজার অনলাইন বাজারে নিয়ে আসার। বাংলাদেশ এ বাজার ধরতে প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে যে কেউ কাজগুলো পেতে বিডে অংশ নিতে পারে। বাংলাদেশ আউটসোর্সিংয়ের উৎস থেকে অর্থ উপার্জনকে উৎসাহিত করছে। ২০১২ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচী গ্রহণ করে এবং প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের অধীনে ৫৫ হাজার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। আউটসোর্সিংই হচ্ছে এ সময়ের সবচেয়ে টেকসই কর্মক্ষেত্র। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের ওয়েব, গ্রাফিক্স ডিজাইন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সোশ্যাল মার্কেটিং, থিম ডিজাইন, প্রোগ্রামিং,ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট, লিংক বিল্ডিং, ডাটা এন্ট্রি টাইপিং, আর্টিকেল বা ব্লগ রাইটিং বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে আউটসোর্সিংয়ের সম্ভাবনাময় খাত থেকে অর্থ আয়ের সুযোগ করে দেবে লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প। সূত্র মতে, সরকারী, বেসরকারী এবং ব্যক্তি উদ্যোগে দেশে এখন প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী আউটসোর্সিংয়ের উৎস থেকে আয় করার জন্য বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে নিবন্ধন করেছে। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার। যারা বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করছে। বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা যে মার্কেট প্লেসটিতে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন করেছে সেটি হচ্ছে ইল্যান্স-ওডেক্স। এ মার্কেট প্লেসটিতে নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ। ২০১৩ সালে ইল্যান্স-ওডেক্স থেকে আয় ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা পূর্ববর্তী বছরের আয় থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি। ২০১৪ সালের আয় ২০১৩ সালের প্রবৃদ্ধির হারের চেয়েও বেশি হবে বলে আশা করছে ইল্যান্স-ওডেক্স। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে।
×