ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

শোকার্ত ১৪ ডিসেম্বর আজ। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি স্মরণ করছে তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যাঁদের হারিয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। একই সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করছে প্রত্যেক শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের স্বজনদের প্রতি; যাঁরা দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে বয়ে চলেছেন আপনজনকে নির্মমভাবে হারানোর বেদনা ও কষ্ট। এই হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দালালরা চেয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যাতে এ দেশে যথাযথভাবে বিকশিত না হয়। যুদ্ধের শুরু থেকেই হানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞের সূচনা করেছিল, একেবারে শেষদিকে এসে পরাজয়ের আগ মুহূর্তে তা রূপ নেয় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকা-ে। হানাদাররা তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকারদের সহযোগিতায় বেছে বেছে হত্যা করেছিল জাতির অগ্রণী শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের। পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা চেয়েছিল স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া দেশটিকে মেধায়-মননে পঙ্গু করে দিতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এই বাহিনীগুলোর সশস্ত্র সদস্যরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে তুলে দিয়েছে পাকিস্তানী ঘাতক বাহিনীর হাতে; কোন কোন ক্ষেত্রে নিজেরাই হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করেছে। বাঙালীর জন্য গ্লানি আর দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, সেসব বিশ্বাসঘাতক নরাধমের অনেকেই পঁচাত্তরপরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজে পুনর্বাসিত হয়েছে; কেউ কেউ মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছে। পাকিস্তানী দুঃশাসনের দিনগুলোতে বরেণ্য সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির বিবেক। পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির সংগ্রামে ত্ারা সর্বদা রাজনীতিকদের দিকনির্দেশনা ও প্রেরণা দিয়েছেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিচারের দাবিটি স্বাধীনতার পর পরই ওঠে। বিচার কাজও চলছিল। কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী শাসকরা বিচার দূরে থাক, বরং তাদের প্রতিষ্ঠিত করেছে সর্বত্র। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বিচার কাজ শুরু করেন নির্বাচনী ওয়াদাকে সামনে রেখে। একাত্তরে যারা হত্যাযজ্ঞে ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনে জড়িত ছিল, তাদের বিচার প্রক্রিয়া এখন সুষ্ঠুভাবে চলছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে রায় ঘোষিত হওয়ার পর একজনের ফাঁসি হয়েছে, আরও কিছু মামলায় অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রায় ঘোষণা করলেও আপীলের ও ফাঁসির অপেক্ষায়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকা- একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোর মধ্যে ঘৃণ্যতম। এসব হত্যাযজ্ঞে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্যেই রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন। এসব ঘাতকের বিচারের মাধ্যমেই জাতি দায়মুক্ত হতে পারে।
×