ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর ৩২ নম্বরে বেপরোয়া গুলি চালায় হানাদাররা

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর ৩২ নম্বরে বেপরোয়া গুলি চালায় হানাদাররা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ ‘বঙ্গবন্ধুকে ২৫ মার্চ কালোরাতে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পরই হানাদার বাহিনী কয়েক ঘণ্টা পর আবার ধানম-ির ৩২ নম্বর বাসভবনে হামলা চালায়। ভেতরের মশারি খাটানো খাটে ব্রাশ ফায়ার করে। পরদিন ২২টি গুলির খোসা উদ্ধার হয়।’ বঙ্গবন্ধুকে পাকবাহিনী গ্রেফতার করে নেয়ার সময়কার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মহিউদ্দিন বৃহস্পতিবার শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মুন্সীগঞ্জ মুক্ত দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এই তথ্য জানান। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি ফিরে যান ভয়ঙ্কর ১৯৭১ সালের সেই রাতে। তিনি বলেন, বাঙালীর স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের সময় তাঁকে মারধর করে ড্রেনের পাশে ফেলে রাখা হয়। হানাদার বাহিনী চলে যাওয়ার পর বঙ্গমাতা দোতলা থেকে নেমে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। গ্রেফতারসহ নানা কাহিনী তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের পাশের সামাদ ভাই লোক পাঠিয়ে বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসাসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকলকে নিয়ে যান তাঁর বাসায়। নয় তো ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু রাতে বঙ্গবন্ধুর বাসায় ছিলেন মহিউদ্দিন ও শেখ কামাল। মধ্যরাতে আবার বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে হামলা চালায় হানাদার বাহিনী। তখন ঘরে শেখ কামাল ও আমি। গুলি করে কলাপসিবল গেটের তালা ভাঙ্গার শব্দ পেয়েই পেছন দিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে যাই দুইজন। পরে ব্রাশফায়ারের শব্দ পেয়ে আমরা ধারণা করি আমাদের লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করছে। তাই আঁকাবাঁকাভাবে নিচু হয়ে দৌড়াতে থাকি। পরে জানা যায়, হানাদার বাহিনী বাসভবনের মশারি খাটানো খাটে ব্রাশফায়ার করে। কিন্তু পাশের বাসায় থাকা বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা তখন ভেবেছেন শেখ কামাল আর মহিউদ্দিন হয় তো বেঁচে নেই। সকালে বাসায় লোক পাঠিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি। তখন ধারণা করেছেন, হয় তো হত্যার পর লাশ নিয়ে গেছে হানাদার বাহিনী। কিন্তু তখন তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন একটু দূরের সরকারী কর্মকর্তা বাহারের বাসায়। বাহার সাহেবের স্ত্রী আওয়ামী লীগ করতেন। সেই সখ্যতার কারণেই সেখানে আশ্রয় নেন এই দুইজন। পরে যখন বঙ্গমাতার সঙ্গে এই দুইজন দেখা করতে এলেন সেই দৃশ্য বর্ণনা করার মতো নয়। তাঁরা বেঁচে আছেন জেনে ভিন্নমাত্রার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এমন নানা স্মৃতিচারণ করেন বঙ্গবন্ধুর সহচর ও সাবেক সাংসদ বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মহিউদ্দিন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনিস-উজ-জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বর্তমান ও সাবেক সাংসদ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও প্রশাসনের কর্মকর্তবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
×