জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যশোর-চৌগাছা সড়কের চুড়ামনকাটির আব্দুলপুরে ট্রাকের চাপায় নসিমন যাত্রী যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক ছাত্রসহ চারজন নিহত ও কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ এবং ঘাতক ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়। এদের মধ্যে গাইবান্ধায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী এবং গাজীপুরে এক টেম্পো যাত্রী রয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের।
যশোরে ট্রাকচাপায় নিহতরা হলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভার বাসিন্দা যবিপ্রবির ছাত্র আবু হানিফ (২৫), যশোরের চৌগাছার চান্দা আছড়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৫০) ও রুহুল আমিনের ছেলে আনিসুর রহমান (২২) এবং চৌগাছার ফুলসরা গ্রামের খায়রুল ইসলাম (২৪)। এর মধ্যে নিহত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্র আবু হানিফ জাতীয় এ্যাথলেটিকসে স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন। তিনি ২০১৩ সালে জাতীয় পর্যায়ের ১০০ মিটার প্রতিবন্ধক দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্বর্ণপদক জয়ের রেকর্ড গড়েন।
যবিপ্রবির প্রক্টর জাহিদ আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আবু হানিফ টাঙ্গাইলের রফিকুল ইসলামের ছেলে এবং যবিপ্রবির ক্রীড়া ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
আহতদের মধ্যে তামান্না, যবিপ্রবির কর্মচারী বীথি (২৮), চৌগাছার দুর্গাপুর গ্রামের তাহাজ্জেলের স্ত্রী স্বপ্না (২৪), মেয়ে রতœা এবং একই গ্রামের জাহাতাবের স্ত্রী খাদিজা (৩৫) ও তার মেয়ে বৃষ্টির নাম জানা গেছে। আহতদের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে চৌগাছার সলুয়া বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে যশোরে যাচ্ছিল নসিমনটি। পথে চুড়ামনকাটির আব্দুলপুরের কাছে বিপরীতমুখী একটি ট্রাক নসিমনকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিন যাত্রী নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং যশোর-চৌগাছা সড়ক অবরোধ করে রাখে। ফলে প্রায় দুই ঘণ্টা ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাইবান্ধায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু ॥ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গায় শুক্রবার ভোরে রেলগেটে ধাক্কা লেগে ফেরদৌস মিয়া (২২) ও খোরশেদ আলম (২০) নামে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। নিহত ফেরদৌস রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী গ্রামের মুজিবুল হকের ছেলে আর খোরশেদ আমিনুল হকের ছেলে।
ভোর চারটার দিকে সাদুল্যাপুরের নলডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলযোগে তিন যুবক বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বামনডাঙ্গা দক্ষিণ রেলগেটের সড়কের গতিরোধক (স্পীড ব্রেকার ) পার হওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলগেটে মোটরসাইকেলটি ধাক্কা লাগে। চালকসহ আরোহীরা মাটিতে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই ফেরদৌস মারা যান। আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নেয়ার পথে হাসানগঞ্জ এলাকায় খোরশেদ মারা যান। আহত অন্য যুবক রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। নিহতদের লাশ স্বজনরা নিয়ে গেছে বলে জানা যায়।
গাজীপুরে টেম্পো আরোহী নিহত ॥ কালিয়াকৈরে ট্রেনের ধাক্কায় টেম্পো উল্টে একযাত্রী নিহত ও টেম্পো চালকসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছে। নিহত টেম্পো যাত্রীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। শুক্রবার কালিয়াকৈরের বরাবপাকার মাথা এলাকার রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন বরাবপাকার মাথা এলাকার লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করছিল। এ সময় সাকাশ্বর থেকে কোনাবাড়ীগামী যাত্রীবাহী একটি টেম্পো রেল লাইনের ওপর উঠে পড়লে ট্রেনটি ওই টেম্পোকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে টেম্পোটি রেললাইনের পাশে ছিঁটকে পড়ে। এ ঘটনায় টেম্পোর এক যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত ও চালকসহ অপর পাঁচজন আহত হয়। স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করে।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের এএসআই মোঃ দাদন মিয়া বলেন, ওইস্থানে কোন গেট প্রতিবন্ধকতা না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
চীন যাওয়া হলো না হানিফের ॥ যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত যবিপ্রবি ছাত্র আবু হানিফের মা-বাবার কান্না থামছে না। তাঁদের আহাজারিতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের বাড়িতে কেউ হানিফের পিতা রফিক মিয়া এবং মা হনুফা বেগমকে সান্ত¡না দিতে পারছেন না। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তাঁরা। শুক্রবার ট্রেনযোগে যশোর থেকে মির্জাপুরে বাড়িতে আসার কথা ছিল হানিফের। বেলা ১১টার দিকে সে বাড়ি আসার পথে ওইস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। শুক্র ও শনিবার বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাটিয়ে রবিবার থেকে বিজেএমসির পক্ষ থেকে চীনে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান গেমসে খেলার জন্য মিরপুর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তার আগেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সম্ভাবনাময় এ এ্যাথলেটিককে জীবন দিতে হলো।