ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে সাত ছাত্রাবাস শিবিরমুক্ত করতে মরিয়া ছাত্রলীগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

চট্টগ্রামে সাত ছাত্রাবাস শিবিরমুক্ত  করতে মরিয়া ছাত্রলীগ

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে জামায়াত শিবিরের শক্ত দুটি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারী হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ। সশস্ত্র দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডারদের শহর এলাকায় অধিকাংশ অপকর্ম পরিচালিত হয় এই কলেজ দুটির সাত হোস্টেলে আশ্রিত বহিরাগতদের সমন্বয়ে। বছরের পর বছর চলে আসছে এ অবস্থা। অতীতে এ দুই কলেজের হোস্টেল থেকে বহু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে চিহ্নিত দাগি আসামি। যার মধ্যে অন্যতম দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নাসির। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রলীগের সংগ্রামের ফলে সম্প্রতি ক্যাম্পাস শিবির ক্যাডারমুক্ত হয়েছে। তবে এদের অবস্থান আশপাশের এলাকা ও কটেজগুলোতে এখনও বিদ্যমান। এমনিতর পরিবেশে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের সাত হোস্টেল শিবির ক্যাডারমুক্ত করতে পনের দিনের আল্টিমেটাম বেঁধে দেয় লালদীঘি ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। যে জনসভায় অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা যথাক্রমে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম উপস্থিত থেকে শিবির চক্রের অপকর্মের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। সর্বশেষ চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ গত বৃহস্পতিবার চার দিনের মধ্যে ছাত্রলীগ প্রদত্ত আল্টিমেটাম বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেছেন অন্যথায় কঠোর পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। এদিকে, চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগ প্রদত্ত আল্টিমেটাম নিয়ে কোন নড়চড় প্রতীয়মান হচ্ছে না। অপরদিকে, ছাত্রলীগ তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে বলে শুক্রবার নগর কমিটির সম্পাদক নুরুল আজম রনি জনকণ্ঠকে জানান, দিন যতই ঘনিয়ে আসছে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে কঠোর হচ্ছে বলে প্রতীয়মান। এ অবস্থায় আল্টিমেটাম শেষে অপ্রীতিকর যে কোন ঘটনার আশঙ্কাও করছে অনেকে। ছাত্রলীগের দাবি, এ দুই কলেজের হোস্টেলগুলোতে জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা অবস্থান করে থাকে। হোস্টেলের খাওয়া দাওয়া, রুমে অবস্থান থেকে শুরু করে সবই করছে বেআইনীভাবে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নির্বিকার। যা কোন অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ তাদের আল্টিমেটাম বাস্তবায়ন না হলে নিজেরাই অভিযানে নামতে পারে। প্রথমে তারা কর্তৃপক্ষকে তাদের দাবি বাস্তবায়নে বাধ্য করার চেষ্টা করবে। নচেৎ, শ্রেণীকক্ষ ও হোস্টেলের কক্ষগুলোতে তালা লাগিয়ে বহিরাগতসহ শিবির ক্যাডারদের বিতাড়িত করার কাজে নামবে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের পক্ষে এখনও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। অনেকে বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত বলে মনে করছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের মতে এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। এ দুটি কলেজের হোস্টেলগুলোকে কেন্দ্র করে জামায়াত শিবির ক্যাডাররা সন্নিহিত চকবাজার, চন্দনপুরা, কাপাসগোলা, বাকলিয়া, শুলকবহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের ত্রাসের আধিপত্য কায়েম করে রেখেছে। এরা শহর এলাকায় যে কোন ধরনের অপকর্ম ঘটিয়ে নিমিষেই হোস্টেলে গা-ঢাকা দিয়ে থাকে। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী চট্টগ্রাম কলেজে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। সে সময় ছাত্রলীগ ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চাইলে শিবির ক্যাডারদের প্রতিবন্ধকতার কারণে তা ব্যর্থ হয়। তখন থেকে ছাত্রলীগ অভ্যন্তরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্ম দেয়। পরে তারা নগর ছাত্রলীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত ৮ ডিসেম্বর লালদীঘি ময়দানে ছাত্র সমাবেশের ডাক দেয়। সে সমাবেশ থেকে কলেজ দুটির হোস্টেল বন্ধ করে দেয়ার জন্য পনের দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। চট্টগ্রাম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর জেসমিন আক্তার ও হাজী মহসিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আলমগীর চৌধুরী শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন হোস্টেল বন্ধের কোন চিন্তা ভাবনা এখনও তাদের নেই। তবে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের কোন নির্দেশ আসলে সে ব্যাপারে তারা কার্যকর ভূমিকা নেবেন।
×