ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইউএনডিপির বিবৃতি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল নিষিদ্ধের দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

ইউএনডিপির বিবৃতি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল নিষিদ্ধের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সকল প্রকার বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ। সেখানে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় উদ্বেগও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া তেলবাহী টাঙ্কার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় সরকারকে সহযোগিতা করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) এক বিবৃতিতে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। গত মঙ্গলবার সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটার তেলভর্তি ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন ট্যাঙ্কার ডুবে যায়। এ সময় ট্যাঙ্কার থেকে তেল বেরিয়ে সুন্দরবনের ওই এলাকার পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। সংঘটিত দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ এই বিবৃতি দেয়। জাতিসংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) দেয়া বিবৃতিতে সংস্থাটি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সকল প্রকার বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং পুনর্বাসন লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের নিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা। বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ঘটনাকবলিত একটি জাহাজ থেকে সুন্দরবনের ভেতরে তেল নিঃসরণের সাম্প্রতিক ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী সংস্থাও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তেল নিঃসরণ এলাকাটি চাঁপাই অভয়ারণ্য সংলগ্ন, যা বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত সর্ববৃহৎ সংরক্ষিত জলাভূমি। এছাড়া গাঙ্গেয় ও ইরাবতি নামক দুটি বিপদাপন্ন ডলফিন প্রজাতির বিচরণ ক্ষেত্র। বিবৃতিতে বলা হয়, শ্যালা নদী পথে সকল প্রকার নৌযান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের যে খবর পত্র-পত্রিকায় এসেছে সেটি প্রশংসাযোগ্য। আমরা মনে করি, এ সিদ্ধান্ত সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে। যদিও এ দুর্ঘটনা সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সকল প্রকার বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও একবার মনে করিয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পাই, সচরাচর পরিবেশের ওপর এ ধরনের দুর্ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে থাকে। সেই পরিবেশের পুনঃসংরক্ষণে বহু প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের প্রয়োজনও হয়। বনসংলগ্ন জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল জনপদের ওপরও এর প্রভাব পড়বে। আমরা বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং পুনর্বাসন লক্ষ্যে সরকারী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের নিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে আগ্রহী। উল্লেখ্য, সুন্দরবন জাতিসংঘের ইউনেস্কো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। জাতিসংঘ অনেক আগেই সুন্দরবনের ভেতর ওই এলাকা দিয়ে বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে নৌপরিবহন অধিদফতর বন আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি (সিবিডি), ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিশনের নিয়ম লঙ্ঘন করে বনের ভেতর দিয়ে বাণিজ্যিক নৌপথ চালু করে। সর্বশেষ মঙ্গলবার তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবে যাওয়ার পরে পুনরায় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে বাণিজ্যিক নৌযান চলাচলের বিষয়ে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে।
×