ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাহরিয়ার আন্তর্জাতিক রেটিং দাবা শুরু

স্কুল দাবার প্রতি গুরুত্বারোপ রানী হামিদ ও জিয়ার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

স্কুল দাবার প্রতি গুরুত্বারোপ রানী হামিদ ও জিয়ার

রুমেল খান ॥ বৃহস্পতিবার। অগ্রহায়ণের পড়ন্ত অপরাহ্ন। কাঠাল বাগানের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের খাঁন হাসান আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওখানে গিয়ে দেখা গেল অভূতপূর্ব এক দৃশ্য। স্কুল প্রাঙ্গণে চলছে ‘ডাঃ শাহরিয়ার মেমোরিয়াল আন্তর্জাতিক র‌্যাপিড রেটিং দাবা প্রতিযোগিতা’ উপলক্ষে একটি অনুুষ্ঠান। দর্শকসারির সামনের দিকে বসে আছে বেশকিছু ক্ষুদে শিক্ষার্থী। আর পেছনের সারিতে তাদের অভিভাবকরা। কচি-কাঁচারা কিচিরমিচির করেই যাচ্ছে, তাদের সামনে মঞ্চে উপবিষ্ট কিংবদন্তি ‘দাবার রানী’ আন্তর্জাতিক মাস্টার রানী হামিদ এবং গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানসহ আরও অনেকেই। তাঁরা মাইকে কি বলছেন, সেদিকে ভ্রƒক্ষেপই নেই তাদের। শ্রোতা যদি মনোযোগী না হয়, তাহলে বক্তার বিরক্ত হওয়ারই কথা। কিন্তু রানী হামিদ-জিয়াকে দেখে মোটেও তা মনে হলো না। যারা হবে আগামীতে দাবার ভবিষ্যত, তাদের ওপর বিরক্ত হলে কি চলে! উন্মুক্ত এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন রানী হামিদ। দুই দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের জন্য থাকছেÑ মোট ২০ হাজার টাকার অর্থ পুরস্কার। আয়োজনে গোল্ডেন চেস ক্লাব। পৃষ্ঠপোষকতায় গোল্ডেন স্পোর্টিং ক্লাব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেনÑ দাবা ফোরেশনের সাধারণ সম্পাদক গাজী সাইফুল তারেক, গোল্ডেন চেস ক্লাবের সভাপতি আমির আলী রানা, সাধারণ সম্পাদক ফারজানা হোসেন এ্যানি, বিডিবিএল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, এ্যাসোসিয়েশন অব চেস প্লেয়ার্সের সভাপতি এনায়েত হোসেনসহ আরও অনেকে। এ ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন করার মাধ্যমে কি ধরনের প্রাপ্তি হবে দেশীয় দাবার? রানী হামিদ বলেন, ‘এ ধরনের দাবা টুর্নামেন্ট থেকে যদি একজন দাবাড়ুরও উত্থান ঘটে, তাহলে অনেক লাভ হবে দেশীয় দাবার। এ জন্য এ ধরনের টুর্নামেন্টের প্রচার-প্রসারের কোন বিকল্প নেই। পাড়ায়-পাড়ায় এমন টুর্নামেন্ট সারাবছরই অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তাহলে একসময় দেখা যাবে ক্রিকেটের চেয়ে বেশি সাফল্য ও সম্মান দেশের জন্য বয়ে নিয়ে আসছে দাবাড়ুরা।’ এ প্রজন্মের শিশুরা তেমনভাবে দাবার প্রতি আগ্রহ নয়। এটা কেন? রানী হামিদ কেনর জবার না দিয়ে বরং সমাধানের উপায় বাতলান, ‘আমাদের সবার উচিত এ প্রজন্মের মিশুদের দাবা খেলার প্রতি আগ্রহী করে তোলা। এ জন্য আমির আলীর মতো আগ্রহী দাবা সংগঠকদের এ খেলায় বেশি করে স্পন্সর করা উচিত। আমি নিজেও একটি দাবা টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে যাচ্ছি, যা শুরু হবে আগামী শনিবার থেকে দাবা ফেডারেশনে। ইন্টারন্যাশনাল ওপেন র‌্যাপিড চেজ।’ সঠিক পরিকল্পনা, দাবার প্রতি মেয়েদের অনীহা, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবÑ এগুলোর কারণেই আরেকজন রানী হামিদের আবির্ভাব ঘটেনি বলে মনে করেন রানী হামিদ। ‘অনেক বছর পর দাবা ফেডারেশনের বাইরে এমন একটি দাবা টুর্নামেন্ট আয়োজিত হচ্ছে বলে আমি খুবই খুশি।’ অভিমত বাংলাদেশ দাবার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের। ‘এ ধরনের টুর্নামেন্ট যত বেশি পরিমাণে হবে, ততই দেশের দাবার জন্য মঙ্গলজনক। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও হওয়া উচিত।’ যোগ করেন তিনি। মজা করে জিয়া বলেন, ‘টুর্নামেন্ট কমিটি যদি আমাকে এ্যালাও করে, তাহলে এ টুর্নামেন্টে আমার খেলার ইচ্ছে আছে!’ জিয়াসহ কেন বাংলাদেশের গ্র্যান্ডমাস্টার সংখ্যা মাত্র ৫? ‘লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল দাবা টুর্নামেন্টগুলোতে আমাদের দাবাড়ুরা বেশি পরিমাণে অংশ নিতে পারে না। দেশের দাবা আজ থেকে দশ বছর আগে যে অবস্থায় ছিল, এখন কি তারচেয়েও ভাল বা একই অবস্থায় আছে কিনা, এটা বলা মুশকিল। আমাদের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে। স্কুল পর্যায়ে দাবার প্রতি জোর দিতে হবে। ২০০৮ সালে আমরা সর্বশেষ একজন গ্র্যান্ডমাস্টার পেয়েছি। পেয়েছি ক’জন আন্তর্জাতিক মাস্টারকেও। আমি আশা করি অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা আরও গ্র্যান্ডমাস্টার ও আন্তর্জাতিক মাস্টার পেয়ে যাব।’ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের প্রতি একটি আর্জিও জানান জিয়া, ‘দাবা খেলার সময় যদি স্কুলের পরীক্ষা থাকে, তাহলে এদিকটায় যেন দাবাড়ুদের ছাড় দেয়া হয়।’
×