ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীতলক্ষ্যা বাঁচাও

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

শীতলক্ষ্যা বাঁচাও

নদীমাতৃক বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস ক্রমশ ম্লান হতে যাচ্ছে। যেভাবে নদীগুলো দখলে-দূষণে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে তাতে এই আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়। বিশেষ করে বলা যায় ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর কথা। ভূমিদস্যুদের দখলবাজি, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্লিপ্ততা এবং নাগরিক সচেতনতার অভাবে নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। এখনই ব্যবস্থা না নিলে নদীগুলো আর রক্ষা করা যাবে না। এই আশঙ্কার কথা বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। রাজধানী ঢাকার চারপাশে চারটি নদী। শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদী। সব নদীর অবস্থা একই রকম। তবে সবচেয়ে নাজুক শীতলক্ষ্যার অবস্থা। নদীটি দখল হতে হতে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, একে রক্ষায় ত্বরিত পদক্ষেপ না নিলে কয়েক বছর পর নদীটি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, দখল ও দূষণে শীতলক্ষ্যা নদী আজ অস্তিত্ব বিলীনের পথে। শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় অবৈধ নদী দখলদার চক্র ফের বেপরোয়া। ফলে দখল ও দূষণে মানচিত্র বদলে যাচ্ছে শীতলক্ষ্যার। এই সরকারের আমলে বেশ কয়েকবার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হলেও প্রভাবশালীদের কারণে আবার দখল হয়ে গেছে ওইসব এলাকা। ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর কমপক্ষে ২০ কিলোমিটার নদীর দু’পাড় এখন অবৈধ দখলের কবলে। এক সময় শীতলক্ষ্যায় পাল তোলা নৌকা চলত। কালের আবর্তে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। ক্রমাগত দূষণ ও দখলে ক্ষীণ জলাধারে রূপ নিয়েছে। নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ঝুঁকিতে কাঁচপুর সেতুও। নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে কলকারখানা, বাণিজ্যিক ভবন ও টংঘর। তা থেকে দখলদাররা আদায় করছে লাখ লাখ টাকা। কয়েকটি স্থান পরিণত হয়েছে মাদকসেবন ও বিক্রির জমজমাট হাটে। নদী দখলের বিরুদ্ধে স্বয়ং সরকার এবং দেশের উচ্চতর আদালত পর্যন্ত সোচ্চার। পরিবেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংস্থা নদী দখলমুক্ত করার জন্য আন্দোলনসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেÑএমন সংবাদও আমরা প্রায়ই পত্রপত্রিকায় দেখছি। কিন্তু বাস্তবে অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। নদীর সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক গভীর। পৃথিবীর বেশিরভাগ সভ্যতাই গড়ে উঠেছে নদীর তীরে। কোন দেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত নদ-নদীগুলো নাব্য হারালে বা অকালমৃত্যুর শিকার হলে সে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনজীবিকা অনেকাংশে নদীনির্ভর। নদীতে নির্বিচারে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানি দূষিত ও বিষাক্ত করে তোলা হচ্ছে। দখলের ফলে দেশের বেশিরভাগ নদীর গতিপথ বদলে যাচ্ছে। এতে গড়ে ওঠা জনপদ বিলীন হচ্ছে। নদী দখল হওয়ার কারণে বর্ষায় সামান্য বৃষ্টির পানিতে রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ। স্বাভাবিক চলাচলেও বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতার কারণে। পরিবেশবাদীরা বলে আসছেন নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। আমরা মনে করি ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাকে বাঁচাতে শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গাসহ সব নদীকে রক্ষা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
×