ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কাদের মোল্লার ছেলের বক্তব্যে আদালত অবমাননার মামলা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

কাদের মোল্লার ছেলের বক্তব্যে আদালত অবমাননার মামলা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদ-কে হত্যাকা- বলার অপরাধে কাদের মোল্লার পরিবারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়েরের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কথা জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেছে জামায়াত-শিবির। বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন ভাংচুর ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ রাজধানীর ঢাকার বংশাল থেকে ২ শিবির ক্যাডারসহ সারাদেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের অন্তত ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ সারাদেশে দোয়া দিবস পালনের পাশাপাশি বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াত-শিবিরের। কর্মসূচীর আড়ালে জামায়াত-শিবির নাশকতা চালানোর পাশাপাশি বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। এদিকে যে কোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর আগাম নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে কাদের মোল্লার ছেলে এক আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তার পিতাকে এক বছর আগে অন্যায়ভাবে মৃত্যুদ- নয় হত্যা করা হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মিরপুরের কসাইখ্যাত কাদের মোল্লার ছেলে বলেন, তার পিতা শহীদ হয়েছেন। তিনি দেশবাসীকে তার পিতার হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে কাদের মোল্লার স্ত্রী সানোয়ার জাহানও উপস্থিত ছিলেন। কাদের মোল্লার ছেলের এমন বক্তব্যের পরেই হৈচৈই শুরু হয়। বৃহস্পতিবারই বিকেলে কাদের মোল্লার ছেলের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কাদের মোল্লার পক্ষ থেকে রিভিউ পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। রিভিউ পিটিশন দায়ের করবেন-এই কথা বলে চেম্বার বিচারকের কাছ থেকে স্থগিতাদেশ নিয়েছিলেন। পরবর্তী দিনে সেটির শুনানি হয়েছে। শুনানিতে আপীল বিভাগ রিভিউ পিটিশন মেরিটে শুনানি করেছেন। মেরিটে শুনানি করে তারা পূর্বের রায় পুনর্বিবেচনা করার মতো কোন যুক্তি পাননি। কাজেই কাদের মোল্লা সমস্ত সুযোগ পেয়েছেন। এ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে ট্রায়াল কোর্টে কাদের মোল্লা সমস্ত সুযোগ পেয়েছেন। বিস্তারিতভাবে আপীলের শুনানি হয়েছে, সেখানে সুযোগ পেয়েছেন। এই শুনানিতে আদালত সাতজন এ্যামিকাস কিউরির বক্তব্য শুনেছেন। সবশেষে আমরা আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছি, রিভিউ চলবে না। তার পরও রিভিউ পিটিশন দায়ের হয়েছে। দায়েরের পর সেই পিটিশন শুনানি হয়েছে। সেই রায় সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে। সেই রায় পড়ার জন্য আমি কাদের মোল্লার পরিবারকে বলব। কেন কাদের মোল্লার রায় পুনর্বিবেচনা করা যায়নি তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই সময়ে তারা যে সব বক্তব্য রাখছেন, একটি মহলের প্ররোচনায় তাঁরা এগুলো করছেন। বিচারটাকে অহেতুক প্রশ্নবিদ্ধ করতে তারা এসব বক্তব্য দিচ্ছেন। এসবের কোন রকম সারবত্তা নেই। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এসব বক্তব্য। আমি তাদের বলব, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যে সব সাক্ষী এসেছে, বিশেষ করে মোমেনার সাক্ষ্য, সেই সাক্ষ্য তারা যাতে পড়ে দেখেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন, কাদের মোল্লা কতখানি অপরাধ সে সময়ে করেছেন এবং কাদের মোল্লাকে আদালত সঠিক দ-ই প্রদান করেছেন। কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ দ- দেয়া না হলে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রত্যেকেই হতাশ হতেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা হতাশ হতেন না হতেন সেটা বড় কথা নয়। আমাদের সর্বোচ্চ আদালত যে বিচার করেছেন, সেই বিচারের পরে তাকে দ- প্রদান করা হয়েছে। এটাকে যদি কাদের মোল্লার পরিবার হত্যা বলে ধরে নেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার প্রসেডিং শুরু করা উচিত। প্রসঙ্গত, গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আপীল বিভাগে যুদ্ধাপরাধ মামলার প্রথম রায়ে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদ-ের রায় দেয়া হয়। ১০ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকরে উদ্যোগ নিলে কাদের মোল্লার আইনজীবীদের আবেদনে চেম্বার বিচারপতি দ- কার্যকর স্থগিত করে দেন। রায় স্থগিত হওয়ার পর কাদের মোল্লার আইনজীবীরা মরিয়া হয়ে ওঠেন। আইনজীবীরা রায় পুনর্বিবেচনা করে কাদের মোল্লাকে খালাসের আবেদন করেন। দু’দিন কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর রাতেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। উল্লেখ্য, আজ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার এক বছর। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর বংশাল থানাধীন নর্থসাউথ রোডের সুরিটোলা এলাকায় জামায়াত-শিবির আচমকা একটি মিছিল বের করে। ২০-২৫ জনের একটি দল বিভিন্ন গলি থেকে বের হয়ে সুরিটোলা রাস্তায় ওঠে। তারা সড়ক অবরোধ করে যানবাহনে ভাংচুরের চেষ্টা করে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ নিরাপদ জায়গায় চলে যান। খবর পেয়ে বংশাল থানা পুলিশের অন্তত ৩০ সদস্যের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয়। পুলিশ মিছিলকারীদের ধাওয়া দেয়। মিছিলকারীরা দ্রুত বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়ে। এরপর বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ বিভিন্ন গলিতে অভিযান চালিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও হাসান আল মাহমুদ নামে দুই শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করে। মামুন মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। আর মাহমুদ ঢাকার মানিকনগর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস ফকির জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃতরা শিবির কর্মী। মিথ্যা যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ার অভিযোগ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। বিক্ষোভকালে মিছিলকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করে। এ সময় পুলিশ দুই শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, সাতক্ষীরা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জামায়াত-শিবির বিক্ষোভ মিছিল বের করে শোডাউন দেয়ার চেষ্টা করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে দেশের কোথাও বড় আকারে কোন বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন বা দেখাতে পারেনি। ঝটিকা মিছিল ও বিক্ষোভকালে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েক নেতাকর্মী পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইব্রাহিম জনকণ্ঠকে জানান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকালে তাদের বেশ কয়েক নেতাকর্মী পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। তবে কতজন আটক হয়েছে সে সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি তিনি। শুক্রবার পবিত্র বাদ জুমা সারাদেশে দোয়া দিবস পালন করা হবে। দোয়া দিবসের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচীও পালনেরও কথা রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দোয়া দিবস পালনের পর জামায়াত-শিবির মাঠে নামতে পারে। মাঠে নেমেই তাদের ঝটিকা মিছিল, রাস্তা অবরোধ ও যানবাহন ভাংচুরসহ নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-শিবিরের প্রকাশ্য কোন কর্মসূচী না থাকায় শুক্রবারের দোয়া দিবসের আড়ালে নাশকতার পাশাপাশি বড় ধরনের শোডাউন দেয়ার চেষ্টা করতে পারে জামায়াত-শিবির। পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, বিষয়টি তাদের আগাম জানা আছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যে কোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
×