ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গাফ্ফার চৌধুরীর আশিতম জন্মবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

গাফ্ফার চৌধুরীর আশিতম জন্মবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারিÑ বায়ান্নর ভাষাশহীদদের নিবেদিত এই কবিতার স্রষ্টা আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী। তাঁর সেই দীর্ঘ কবিতাটি প্রথমে আবদুল লতিফ ও পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদের সুরে প্রভাত ফেরির গান হিসেবে যেন মিশে গেছে বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে। প্রতিবছরই অমর একুশের উচ্চারণে বাঙালির মনে বিশেষ ব্যঞ্জনার সুর তুলে এই গানটি। আজ শুক্রবার অমর একুশের এই গানের রচয়িতা প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরীর ৮০তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি ও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ৮০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি আজ বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে জাতীয় সংবর্ধনা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। দেশের বিশিষ্ট লেখক-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী-রাজনীতিক-সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে শুভেচ্ছা জানাবেন। সাংস্কৃতিক পর্বে রয়েছে সম্মেলক কণ্ঠে জাতীয় সংগীত, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত অমর একুশের গান, পঞ্চকবির গান ও লালনগীতি পরিবেশনা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় সংবর্ধনা কমিটির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের মহাপরিচালক মোনায়েম সরকার। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হয়। এতে বক্তব্য দেন জাতীয় সংবর্ধনা কমিটির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কবি আসাদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের মহাপরিচালক মোনায়েম সরকার প্রমুখ। ১৯৩৪ সালের আজকের এই দিনে (১২ ডিসেম্বর) বরিশাল জেলার জলবেষ্টিত গ্রাম উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী। ১৯৪৭ সাল থেকে স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করলেও ১৯৫০ সালেই গাফ্ফার চৌধুরীর কর্মজীবন পরিপূর্ণভাবে শুরু হয়। দৈনিক ইনসাফ, সংবাদ, ‘মাসিক সওগাত’, ‘দিলরুবা’, ‘মেঘনা’, ‘ইত্তেফাক’, ‘আজাদ’, ‘জেহাদ’, ‘পূর্বদেশ’সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক ‘জয়বাংলা’য় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ ও ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘দৈনিক জনপদ’ বের করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। দেশে ফেরার পর তাঁর স্ত্রী গুরুতর রোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাঁকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনের উদ্দেশে পাড়ি জমান। এরপর তাঁর প্রবাস জীবনের ইতিহাস শুরু হয়। প্রবাসে বসে এখনও গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন। আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ বাংলাদেশের প্রধান পুরস্কারের প্রায় সব ক’টিই পেয়েছেন। সাংবাদিকতায় যেমন তাঁর অবদান আছে তেমনি একজন সুসাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতিমান তিনি। তরুণ বয়সে প্রচুর কবিতা লিখেছেন। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ তখনই লেখা। গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাস লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’সহ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০টি। এছাড়াও তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’।
×