ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাডিলেডে বৃষ্টি ও অস্ট্রেলিয়ার দিন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১১ ডিসেম্বর ২০১৪

এ্যাডিলেডে বৃষ্টি ও অস্ট্রেলিয়ার দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পিঠের ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠা মাইকেল ক্লার্ক ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে প্রথম দিন মাঠ ছাড়েন ৬০ রানে। বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ায় কাল দ্বিতীয় দিন খেলা হয়েছে মোটে ৩০.৪ ওভার, তাতেই সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। মাথা নিচু করে ব্যাটটা সামান্যই উঁচু করেছেন, সেঞ্চুরির পর এমন নির্লিপ্ত ক্লার্ককে আর কখনই দেখা যায়নি। দুটি কারণে উচ্ছ্বাসহীন অসি সেনাপতি। এক. ভ্রাতৃতুল্য ফিলিপ হিউজেসের অকাল মৃত্যু-শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি, খেলছেন কালো ব্যাজ পরে। দ্বিতীয়ত ‘অবিশ্বাস্য অফ-ফর্ম’ কাটিয়ে রানে ফিরেছেন ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে...! ক্লার্কের আবেগী ফেরায় বাড়তি রং চড়িয়েছেন স্টিভেন স্মিথ। ১৬২ রানে অপরাজিত তরুণ অলরাউন্ডার স্বপ্ন চোখে এখন জীবনের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন। সব মিলিয়ে ১২০ ওভারে ৭ উইকেটে ৫১৭ রান করে ভারতকে চাপা দেয়ার পথটা বানিয়ে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া! ৬ উইকেটে ৩৫৪ রানে বুধবার দ্বিতীয় দিন শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। দিনভর চলে ‘এই বৃষ্টি এই রোদ’, ‘এই বন্ধ এই শুরু’র গিনিপিগ খেলা। তাতে ১ উইকেট হারিয়ে আও ১৬৩ রান যোগ করে বড় স্কোর পায় স্বাগতিকরা। কন্ডিশনের বিচারে পাঁচ শতাধিক রান এখনই সফরকারী বিরাট কোহলিদের জন্য নিশ্চিত কঠিন চ্যালেঞ্জ। তার ওপর ১৬২ রানে ব্যাট করছেন স্মিথ। ফর্মের তুঙ্গে থাকা ২৫ বছর বয়সী নিউ সাউথ ওয়েলস প্রতিভার প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির অপেক্ষায় অসিরা। আজ সকালেই তাঁকে ফিরিয়ে দিতে না পারলে আড়াই দিনেই কোণঠাসা হয়ে পড়বে অতিথি শিবির। ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে অসাধারণ ব্যাটিং করছেন স্মিথ। ১৭৩ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ১৬২ রান নিয়ে ব্যাট করছেন তিনি। ২৩১ বলের ইনিংসে রয়েছে ২১টি চারের মার। স্থানীয় সময় তিনটায় বৃষ্টি শুরুর আগে খেলা হয় ১৪ ওভার। তার আগেই অবশ্য সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেলেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা স্মিথ। এ নিয়ে ২০১৪ সালে সপ্তম টেস্টে ৩ হাফ সেঞ্চুরি ও তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিলেন তিনি। গ্রেট স্টিভ ওয়াহর পর পাঁচ নম্বর পজিশনে এতটা ভাল ব্যাটসম্যান আর পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তবু দিন শেষে সঙ্গী ক্লার্কের প্রশংসাতেই পঞ্চমুখ হয়েছে স্মিথ। ‘হিউজেস-স্মৃতি, ক্ষণে-ক্ষণে বৃষ্টির বাগড়া, এতকিছুর পরও মনোসংযোগ ধরে রাখা কঠিন, এ জন্য কৃতিত্বটা আমি ক্লার্ককে দেব। সে আমাকে সাহস যুগিয়েছে। আর পিঠের ব্যথা নিয়েও ক্লার্ক যেভাবে ব্যাট করেছে, তা অনুকরণীয়।’ স্মিথের চেয়ে ক্লার্কের ইনিংসটার পরিধি ছোট। কিন্তু অধিনায়কের সেঞ্চুরির মাহাত্ম্য অনেক। কিছু দিন ফর্ম-ফিটনেস নিয়ে ধুঁকছেন তিনি। তার ওপর হিউজেসের অকাল মৃত্যুতে ক’দিন নাওয়া-খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। প্রথম টেস্টে খেলবেন কী না, ম্যাচ শুরুর আগ মুহূর্তেও তা নিশ্চিত ছিল না। নামলেন, টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন এবং ফর্মে ফিরলেন সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে! ব্যাপারটা মোটেই এলেন আর সেঞ্চুরি পেলেনÑ এমন নয়। মঙ্গলবার প্রথম দিন ৬০ রানে পিঠের ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠেন, মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। এ নিয়ে ক্যারিয়ারে তিন তিনবার ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে মাঠ ছাড়েন। কাল নামেন ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে। এরপর ১৬৩ বলে ১২৮, ২৮তম সেঞ্চুরি। চলতি বছরে এটি তার মাত্র দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। মজার বিষয় ক্লার্ক তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান যার হাফ সেঞ্চুরির (২৭) চেয়ে সেঞ্চুরি সংখ্যা বেশি। অপর দু’জন হলেন ডন ব্র্যাডম্যান ও ম্যাথু হেইডেন (কম পক্ষে ২৫ সেঞ্চুরি আছে এমন ব্যাটসম্যানের মধ্যে)। কেবল তাই নয়, বিশ্বের পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে ভারতের বিপক্ষে দুই হাজারের ওপরে রান সংগ্রহ করলেন ক্লার্ক (২০৪২)। এ্যাডিলেডে তার গড় এখন ১০০.৫০! ক্লার্ককে ফিরিয়ে দিয়ে ভারতকে দিনের একমাত্র উইকেটটি এনে দেন অভিষিক্ত স্পিনার করণ শর্মা। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ৫১৭/৭ (১২০ ওভার; ওয়ার্নার ১৪৫, স্মিথ ১৬২*, ক্লার্ক ১২৮, মিচেল মার্শ ৪১, ওয়াটসন ১৪; সামি ২/১২০, এ্যারন ২/১৩৬, করণ শর্মা ২/১৪৩, ইশান্ত ১/৮৫)। ** দ্বিতীয় দিন শেষে
×