ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুত মেলায় তাৎক্ষণিক সংযোগ, লোড বৃদ্ধির সুযোগ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১১ ডিসেম্বর ২০১৪

বিদ্যুত মেলায় তাৎক্ষণিক সংযোগ, লোড বৃদ্ধির সুযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘জ্বলছে আলো চলছে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে আজ থেকে রাজধানী ঢাকায় জাতীয় বিদ্যুত সপ্তাহ-২০১৪-এর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিদ্যুত সপ্তাহে রাজধানীর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। জাতীয় বিদ্যুত সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ বাণী দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বিদ্যুত মেলায় বিদ্যুত সাশ্রয়ী যন্ত্রাংশ প্রদানের পাশাপাশি। বিতরণ কোম্পানিগুলো বিশেষ সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রেখেছে। মেলাতে এলেই গ্রাহক তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুত সংযোগ পাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের লোড বৃদ্ধি করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ জাতীয় বিদ্যুত সপ্তাহ উপলক্ষে দেয়া বাণীতে বলেন, এই কর্মসূচী ভবিষ্যত জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে বিদ্যুত ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করবে। বর্তমান সরকার বিদ্যুতের গুরুত্ব অনুধাবন করে এ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, বিতরণ ও সঞ্চালনে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। নতুন নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের ফলে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ১১ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের পাশাপাশি সরকার আন্তঃদেশীয় গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করছে। ভারতসহ অন্যান্য সার্কভুক্ত দেশ থেকেও বিদ্যুত আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অতীতের তুলনায় বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি আমাদের জাতীয় অর্থনীতিকে আরও বেগবান করার পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, ২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় দেশের বিদ্যুত খাতের অবস্থা ছিল অত্যন্ত নাজুক। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আমরা বিদ্যুত খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচী গ্রহণ করি। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০১৩ সালে ৭ হাজার মেগাওয়াট নির্ধারণ করা হয়। আমাদের নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও পরিশ্রমের ফলে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ১০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। আমাদের সরকারের বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিদ্যুত খাতকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে ১১ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরার পালাটানা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং সার্কভুক্ত দেশ নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবর্তন, বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধা এবং নিজস্ব সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২১ সাল নাগাদ বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ২০ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদিত বিদ্যুত জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সঞ্চালন ও বিতরণ খাতেও ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বিদ্যুত উৎপাদন অত্যন্ত ব্যয়বহুল কার্যক্রম। এজন্য বিদ্যুত ব্যবহারে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। তাই দেশের ভবিষ্যত জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহারের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। জাতীয় বিদ্যুত সপ্তাহ উপলক্ষে বুধবার বিদ্যুত ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ ব্যবস্থায় উন্নতি হলেও সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহারে জনসচেতনতা ‘কাক্সিক্ষত হারে’ অর্জিত হয়নি। বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যত প্রজন্মকে সাশ্রয়ী বিদ্যুত ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। দেশের মানুষকে বিদ্যুত ব্যবহারে সাশ্রয়ী করে গড়ে তোলার জন্যই এ মেলার আয়োজন। প্রতিবছর ৭ ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুত সপ্তাহ শুরু হলেও এ বছর ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত সপ্তাহ উপলক্ষে র‌্যালি ও সভা সেমিনারের আয়োজন করেছে বিদ্যুত বিভাগের কর্মকতা-কর্মচারীরা। বিদ্যুত মেলা উপলক্ষে দেশব্যাপী র‌্যালি, বিদ্যুত সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি প্রদর্শন, ওয়ান পয়েন্ট সার্ভিস সেন্টার স্থাপন, বিদ্যুত কর্মীদের নিরাপত্তামূলক মহড়া ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। স্কাউটদের মাধ্যমে সারাদেশে বিদ্যুত সাশ্রয়ী সচেতনামূলক স্কাউট ক্যাম্প আয়োজন করা হবে ১৬ থেকে ১৮ ডিসেম্বর। এদিকে বিদ্যুত সপ্তাহ উপলক্ষে আজ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিদ্যুত খাতে বিভিন্ন বিষয়ে উৎসাহ সৃষ্টির জন্য নয়টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার বিতরণ করবেন রাষ্ট্রপতি। এছাড়া আজ থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনের বিদ্যুত মেলাও অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় অংশ নিচ্ছে সরকারী-বেসরকারী ৯৭টি প্রতিষ্ঠান।
×