ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাফল্য অক্ষুণ্ন রাখার চ্যালেঞ্জ হকির

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৪

সাফল্য অক্ষুণ্ন রাখার চ্যালেঞ্জ হকির

রুমেল খান ॥ বিজয়ের মাসে আরও অনেক বিজয়। প্রথমে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জিম্বাবুইয়েকে টেস্টে-ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ, তারপর ফুটবলে শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডের ভুটানে গিয়ে ‘কিংস কাপ’-এ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এরপর গত রবিবার সুদূর পাকিস্তান থেকে আসে আরেকটি সুখবর। আইএইচএফ হ্যান্ডবল ট্রফি টুর্নামেন্টে মহিলা বিভাগে স্বাগতিক পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা হ্যান্ডবল দল। ওই একইদিন ঘরের মাঠে এএইচএফ জুনিয়র হকির বাছাইপর্বেও (অনুর্ধ-২১) অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ফাইনালে ৪-০ গোলে হারায় ওমানকে। কৃষ্ণ অমাবস্যার পর আসে ঝলমলে আলোকিত দিবস। একরাশ দুঃখের পর আসে অনাবিল সুখ। তেমনি ক্রমাগত ব্যর্থতার পর আসে নজরকাড়া সাফল্য। বাংলাদেশের ক্রীড়া সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বার বার পর্যবসিত হচ্ছিল ব্যর্থতায়। সেখানে বিজয়ের মাসে হকিসহ বিভিন্ন খেলায় বাংলােেশর নজরকাড়া সাফল্য এদেশের ক্রীড়ামোদীদের হৃদয়ে যেন বইয়ে দিয়েছে আনন্দের ফল্গুধারা। এ ধরনের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হলো। টুর্নামেন্টের সেরা দু’দলের একটি হয়ে আগামী ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য অনুর্ধ-২১ এশিয়া কাপে খেলা আগেই নিশ্চিত করেছিল স্বাগতিকরা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে চাইনিজ তাইপেকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করে টুর্নামেন্টে উড়ন্ত সূচনা করে বাংলাদেশ। এরপর লাল-সবুজের পতাকাবাহীদের জয়রথ ছুটতেই থাকে। একে একে তারা পরাভূত থাইল্যান্ড (১০-০), ওমান (৭-০) ও শ্রীলঙ্কাকে (৭-০)। বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক অসীম গোপ এ ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেন। পুরো ম্যাচে ৬টি সেভ করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের কৌশিকের একটি গোল বাতিল করে দেন ম্যাচ আম্পায়ার। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশের কোচ মামুনুর রশিদ বলেন, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে ডিফেন্স লাইন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, সেই ডিফেন্স লাইন কোন গোল হজম করতে দেয়নি দলকে, বিষয়টি নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত তিনি। সেই সঙ্গে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ভারতে গিয়ে প্রস্তুতিমূলক ৭ ম্যাচ খেলা (ভারতের পাঞ্জাবে গিয়ে ৭টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ৬টিতেই জেতে বাংলাদেশ অনুর্ধ-২১ দল। হারায় সাই একাডেমিকে ৫-১, সেন্টার অব এক্সিলেন্সকে ৬-১, চ-িগড় একাদশকে ৬-০, মোহালি একাদশকে ৪-২, এনআইএসকে ৪-০ এবং ঝাড়খ- একাডেমিকে ৭-২ গোলে। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দল হরিয়ানা একাদশের কাছে হেরে যায় ২-১ গোলে। ১০ দিনে ৭ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের গোলসংখ্যা ৪৭, খায় ৮ গোল। পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল পায় ৫০ শতাংশ), কোচ হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারা, পর্যাপ্ত অনুশীলন, ইনজুরি ও শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা না থাকা, সর্বোপরি টিম হিসেবে খেলতে পারা এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলাকেই দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে মূল কারণসমূহ হিসেবে চিহ্নিত করেন কোচ। এ টুর্নামেন্টে মোট ৩৫ গোল করে বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ গোলদাতা হন বাংলাদেশের খোরশেদুর রহমান (১০ গোল), সেরা গোলরক্ষক হন বাংলাদেশের অসীম গোপ (বাংলাদেশ)। মজার ব্যাপার, এ বছরের ২৩ মার্চ এশিয়ান গেমস হকির বাছাইপর্বের ফাইনালে বাংলাদেশ ৬-১ গোলে এই ওমানকেই শোচনীয়ভাবে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে অনাবিল আনন্দে ভাসিয়েছিল দেশের সব ক্রীড়াপ্রেমীদের। যদি চাওয়াটা হয় নিখুঁত, তাহলে পাওয়াটা হবে সুনিশ্চিত। আশির দশকে এ দেশের এক নম্বর জনপ্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। তারপরই ছিল হকির অবস্থান। নব্বই দশকেও তাই। সত্তর দশকে আব্দুস সাদেক, শামসুল বারী, প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, রামা লুসাই, জুম্মন লুসাই, বশির আহমেদ, জামাল হায়দার, আশি থেকে নব্বই দশকে মাহবুব হারুন, মামুন, নিক্সন, ইসা, মুসা, রফিকুল ইসলাম কামাল, কিসমত, খাজা রহমতউল্লাহর মতো খেলোয়াড়দের হকি স্টিকের নিপুণ কারুকার্যে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে পঙ্গপালের মতো ঢল নামত দর্শকদের। ফুটবলের মতো হকি ম্যাচেও ছড়িয়ে পড়ত উত্তেজনা। আর তা সামাল দিতে পুলিশকে নামতে হতো এ্যাকশনে। শুধু তাই নয়, দেশীয় হকি লীগ এতটাই রমরমা ছিল যে, লীগে খেলে গেছেন পাকিস্তনের কামরান আশরাফ, তাহির জামান, ভারতের ধনরাজ পিল্লাইসহ আরও অনেক বিশ্বখ্যাত হকি তারকারা। হকি ম্যাচে কোন গ-গোল হলে স্টেডিয়ামের ভেতরে থাকা এবং স্টেডিয়ামের বাইরে থাকা কত মানুষ যে পুলিশের মাধ্যমে ছিটানো কাঁদানো গ্যাসের শিকার হয়ে নাকের জল চোখের জল এক করেছেন, তার কোন ইয়ত্তা নেই! তারপর কোথায় যে হারিয়ে গেল সেইসব দিনগুলো! আবারও দেশের হকি জেগে উঠছে, এখন দেখার বিষয়, সামনের দিনগুলো বাংলাদেশের হকির কতটা অগ্রগতি হয়।
×