ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘন কুয়াশায় ফ্লাইট সিডিউল বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১০ ডিসেম্বর ২০১৪

ঘন কুয়াশায় ফ্লাইট সিডিউল  বিপর্যয়

আজাদ সুলায়মান ॥ কুয়াশা ঘন থাকলে বৈমানিকের করার কী আছে? হয় রুট পরিবর্তন করে ফ্লাইট চলে যাবে অন্যত্র, নয়ত আশপাশের কোন এয়ারপোর্টে অবতরণ করবে, বা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিবে দেরিতে। তাতে সি্িডউল বিপর্যয় অনিবার্য। মঙ্গলবার এমনই অনিবার্য সিডিউল বিপর্যের কবলে পড়ে বিমানসহ সব কটা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। তাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জার্তিক বিমানবন্দরে দেখা দেয়, যাত্রী দর্শনার্থীদের সীমাহীন ভোগান্তি। খুলনা থেকে আগত উর্বসী তাঁর স্বামীর জন্য ভোর পাঁচটা থেকে অপ্্েক্ষা করছেন ১নং ক্যানপীর বাইরে। তথ্য কেন্দ্রের সামনে রেলিং ধরে দু‘ঘণ্টা অপ্ক্ষোর পর শুনতে পান-কুয়েত ফ্লাইট তিন ঘণ্টা দেরিতে নামবে। ঘন কুয়াশার কারণেই সেটি কুয়েত থেকে দেরিতে রওনা দিয়েছে। উর্বসীর মতো কয়েক শত দর্শনার্থী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় কাটাতে হয় শাহজালালে। তাঁরা সবাই শুনতে পান তথ্য কেন্দ্রের ঘোষণা-ঘন কুয়াশার জন্য ভোর থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত সব কটা ফ্লাইটেই বিলম্ব ঘটবে। শুধু মঙ্গলবার নয়, গত কদিন ধরেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট সিডিউলে দেখা দেয় বিপর্যয়। ভেঙ্গেপড়া সিডিউল স্বাভাবিক করতে হিমশিম খেতে হয় এয়ারলাইন্সগুলোকে। ঘন কুয়াশার দরুন রাত ১১টার পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট ঠিক সময়ে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারছে না। সকালে যে ফ্লাইটগুলোর অবতরণ করার সিডিউল ছিল, সেগুলো ঢাকায় অবতরণ না করে কলকাতায় গিয়ে নামে। সেখানে ২-৩ ঘণ্টা কাটাতে হয় অলস। ঢাকা থেকে ক্লিয়ারেন্স পাবার পর সেগুলো ফিরে আসে। একই সংকট ছিল উড্ডয়নের ক্ষেত্রেও। বেলা বারোটা পর্যন্ত সিডিউল মতো কোন ফ্লাইটই ঢাকা ছাড়তে পারেনি। সিভিল এ্যাভিয়েশান জানায়, এবারের শীতে মঙ্গলবারই ছিল সবচেয়ে বেশি কুয়াশাচ্ছন্ন। এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোলের ভাষ্য মতে, কমপক্ষে ৮০০ মিটার ভিজিবিলিটি না থাকলে, কিছুতেই কোন ফ্লাইট অবতরণ বা উড্ডয়ন করতে পারে না। মঙ্গলবার ভোর থেকেই প্রচন্ড ঘন কুয়াশার কারণে এর চেয়ে কম দূরত্বেও ভিজিবিলিটি ছিল না। ফলে ভোর থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত কোন ফ্লাইট উড্ডয়ন বা অবতরণ করার জন্য সিগন্যাল পায়নি। এমন কি শেষ রাতের ফ্লাইটগুলোও সময়মতো অবতরণ ও উড্ডয়ন করতে পারছে না। এয়ারপোর্ট সূত্র জানায়, ঘন কুয়াশার দরুন ঠিকমতো ফ্লাইট ওঠানামা করতে না পারার কারণে তার্কিশ এয়ারলাইন্স তাদের ভোরের ফ্লাইটটির শিডিউল পরিবর্তন করেছে। এই এয়ারলাইন্সের যে ফ্লাইটটি ভোরে অবতরণ করত সেটি এখন সকাল ১০টায় অবতরণ করছে। ৩-৪ দিন আগেও তার্কিশ এয়ারলাইন্সটি ঠিক সময়ে শাহজালালে অবতরণের চেষ্টা করে। কিন্তু কুয়াশার কারণে পারেনি। পরে ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম, সিলেট এমনকি কক্সবাজারে অবতরণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এক সময় সেটি কলকাতায় অবতরণ করে। পর পর দু’দিন এই অবস্থা চলার কারণে তারা ইস্তাম্বুল থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর ফ্লাইট উড্ডয়ন করছে। এই অবস্থায় পড়ে তার্কিশ এয়ারলাইন্স ইস্তাম্বুল থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর উড্ডয়ন করার সিদ্ধান্ত নিলেও অন্য এয়ারলাইন্স এমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ কারণে ঢাকায় অবতরণের ক্ষেত্রে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সিভিল এ্যাভিয়েশান জানিয়েছে, অবতরণের সময় যদি ৩-৪ ঘণ্টা দেরি বা বেশি লাগে, উড্ডয়নেও সেটা তেমনই সময় নষ্ট হয়। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদেরও। সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে কুয়েত এয়ারলাইন্সের যে ফ্লাইটটি অবতরণের কথা ছিল কিন্তু সেটি সময়মতো নামতে পারেনি। ৫টায় কুয়ালালামপুর থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০৮৬, দোহা থেকে ৭টা ৪৫ মিনিটে বিজি ০২৬, দুবাই থেকে সকাল ৮টায় ইকে ৫৮২, ৮টা ১৫ মিনিটে বিজি ০৪৮ অবতরণ করার কথা থাকলেও কোনটিই সিডিউল অনুযায়ী নামতে পারেনি। ঠিক সময়ে নামতে পারেনি কুয়ালালামপুর থেকে আসা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের এরএক্স ৭৮৩ ৮টা ২০ মিনিটের ফ্লাইটটিও। সকালে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার ক্যানপীতে প্রচন্ড ভিড়। স্বজনদের আগমনের অপেক্ষায় নিচে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাঁদের। এ সময় জানতে চাইলে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, কুয়াশা কেটে গেলেও হঠাৎ সব ঠিক হয় না। প্রচ- চাপ পড়ে প্রতিটি এয়ারলাইন্সের ওপর। সিডিউল একটা এফেক্ট হলে অন্যটাও তার শিকার হয়। বিমান চলাচলের সিডিউল নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, কমপ্্ক্েষ ৮০০ মিটার ভিজিবিলিটি যতক্ষণ না দেখা যায়,ততক্ষণ এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল কোন ফ্লাইটকেই টেক অফ বা ল্যান্ড করার অনুমতি দেয় না। প্রতি বছর এই সময়টাতে ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইট সিডিউলে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এবারও তাই হয়েছে। কুয়াশা কেটে গেলে এই সমস্যা থাকবে না।
×