ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, পাঁচ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, পাঁচ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় রাজশাহী কলেজের ছাত্রীবাহী বাস উল্টে তিনজনের প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সোমবার সকাল থেকে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নগরীতে। নিরাপদ সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত, কাঠামোগত হত্যাকা- বন্ধ, ভাড়া নেয়া বাসের পরিবর্তে সরকারী বাস চালু ও দুর্ঘটনাকবলিত বাসের চালক এবং হেলপারের বিচার দাবিতে সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাস ও নগরীর সাহেববাজার এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় বেশ কয়েক দফা গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালায় শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস ও বাইরে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। এদিকে সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে রাখায় নগরীজুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে প্রায় ৫ ঘণ্টা রাজশাহী নগরীর আলুপট্টি থেকে কোর্ট মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এর আগে ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দোষীদের শাস্তি দাবিতে সোমবার সকাল থেকে প্রথমে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। তবে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। পরে সেখান থেকে একটি অংশ বেরিয়ে এসে নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিলে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সকালে তারা কলেজের শোক কর্মসূচীতে অংশ নিতে আসেন। কিন্তু পুলিশ তাদের কলেজ চত্বরে প্রবেশে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা জোর করেই ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে সকাল ১০টার কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে কলেজ চত্বর থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ আবারও তাদের বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা তাদের বাগ্বিত-া হয়। এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন নগরীর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর হোসেন খন্দকার। এদিকে, নগরীর মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, বাস দুর্ঘটনায় থানার উপ-পরিদর্শক বাকি বিল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলাটি দায়ের করেছেন। এতে আসামি করা হয়েছে রাজশাহী কলেজের ছাত্রীবাহী লাকি পরিবহনের (ঢাকা-জ-৩৬৫১) চালক ও হেলপার এবং সিরাজগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ইসলাম পরিবহনের (ঢাকা-জ-১১-০৮৪০) চালক ও হেলপারকে। রবিবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। পরে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে কাটাখালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মোস্তফা জামানকে। তবে তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। অন্যদিকে, এ ঘটনায় রাজশাহী কলেজের গঠিত তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির কমিটির সদস্য ও রাজশাহী কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করছেন। সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান জানান, তাঁরা শিক্ষার্থীদের বোঝাচ্ছেন। আন্দোলন না করে কিভাবে সুষ্ঠু সমাধান করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এদিকে, শিক্ষার্থীরা তাদের চার দফা দাবি পেশ করেছেন। এসব দাবিগুলো হলো, দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরন, তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি, রাজশাহী কলেজের বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষিত ও দক্ষ চালক নিয়োগ করতে হবে। শোক পালন ॥ বাস উল্টে তিন ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় পূর্ব ঘোষিত শোক কর্মসূচী পালন করেছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সকালে কালো ব্যাজ ধারণ ও শোকর‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী সোমবার রাজশাহী কলেজের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়। প্রসঙ্গত, রবিবার বিকেলে ক্লাস শেষে কলেজের ভাড়া করা বাসে নিজ নিজ বাড়ি ফেরার পথে নগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালীতে বিপরীত দিক থেকে আসা বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে রাজশাহী কলেজের বাস উল্টে তিন ছাত্রী নিহত হয়।
×