ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যৌথ বিবৃতি

ভুটান দেবে জলবিদ্যুত বাংলাদেশ ব্যান্ডউইথ সহযোগিতা

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

ভুটান দেবে জলবিদ্যুত বাংলাদেশ ব্যান্ডউইথ সহযোগিতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশকে জলবিদ্যুত দেবে ভুটান। দুই দেশ যৌথভাবে বিদ্যুত খাত উন্নয়নে একে অপরকে সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভুটান দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আন্তঃসংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করবে। অপরদিকে ভুটানকে ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ। ঢাকায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে বাংলাদেশ-ভুটান যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২৭ দফা এই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সোমবার ঢাকায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের তিন দিনের সফর শেষ হয়েছে। সফর শেষে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর দুই দেশ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে বাংলাদেশ-ভুটানের দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে ভুটান থেকে জলবিদ্যুত আমদানির বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে জলবিদ্যুত সহযোগিতা দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আন্তঃসংযোগ বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট, বাণিজ্য, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সংস্কৃতি বিনিময় বাড়াতে ঐকমত্য হয়েছে। ১৯৭১ সালে ভুটান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম স্বীকৃতি দেয়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হবে বলে মনে করে ভুটান। বাংলাদেশ থেকে ভুটান উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশ এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। বাংলাদেশ-ভুটান পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে একযোগে কাজ করবে। এ ছাড়া জলবিদ্যুত উন্নয়নে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-ভুটান কৃষি খাত উন্নয়নে একযোগে কাজ করবে। এই লক্ষ্যে উভয় দেশ একটি যৌথ কারিগরি দল গঠন করবে। বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় ভুটানের দূতাবাস স্থাপনের লক্ষ্যে বিনামূল্যে জমি দেয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে শনিবার বাংলাদেশে আসেন। এই প্রতিনিধি দলে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিনজিন দর্জি ও অর্থমন্ত্রী নরবু ওয়াংচুক ছিলেন। এ ছাড়া ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দলও ঢাকায় আসেন। বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম দেশ ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই তোবগের প্রথম ঢাকা সফর। তিনি গত বছরের জুলাইয়ে ভুটানের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছিলেন, ভুটানের জনগণের উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে তোবগে বাংলাদেশে আসার আগ্রহের কথা বলেন। তা শোনার পর শেখ হাসিনা তাকে আমন্ত্রণ জানান। ভুটানের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দলও প্রধানমন্ত্রী তোবগের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ সফরে তোবগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তিন দিনের সফর শেষে সোমবার ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ভুটান। ঐতিহাসিক সেই দিনটিতেই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ঢাকা সফরে এসেছেন। গত বছর জুলাই মাসে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকায় শেরিং তোবগের এটাই প্রথম সফর। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন ॥ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন। শেরিং রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু যাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনি যাদুঘরে এসে পৌঁছলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে তিনি জাদুঘরের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন এবং পরিদর্শন বইয়ে সই করেন। এ ছাড়া সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়।
×