ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ হানাদারমুক্ত

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

আজ হানাদারমুক্ত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আজ ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্তি হয় চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, ঝালকাঠি, মাদারীপুর নড়াইল, খাগড়াছড়ির রামগড়, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহের ভালুকা, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ। ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলার দামাল ছেলেরা বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দখলমুক্ত করে। এদিন স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় প্রশাসন অংশ নিবে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানোÑ চট্টগ্রাম ॥ চট্টগ্রামের মীরসরাই হানাদারমুক্ত দিবস আজ ৮ ডিসেম্বর। চট্টগ্রামের প্রথম উপজেলা হিসেবে মীরসরাই হানাদারমুক্ত হয় একাত্তরের এই দিনে। মীরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পতপত করে উড়ে লাল সবুজের বিজয় পতাকা। বিজয়ানন্দে উদ্বেল জনতা সেদিন মুক্তির গান গেয়ে ওঠে সমস্বরে। ১৯৭১ সালের মার্চে চট্টগ্রামের দিকে পাক হানাদারদের আগমন প্রতিরোধ করতে ঐ রাতে উড়িয়ে দেয়া হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শুভপুর ব্রিজ। তারও পরে উপজেলা সদরের অছি মিয়ার পুল উড়িয়ে দিলে ১৩ দিন আটকে থাকে হানাদার দল। এ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামের মুক্তিবাহিনী রণপ্রস্তুতি নেয়। উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের মলিয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬০ শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মীরসরাই রেলওয়ে স্টেশন রোডের ওয়ার্লেস এলাকা থেকে পাকবাহিনীর জিপ আসার খবরে প্রস্তুত হয় বীরের দল। দীর্ঘক্ষণ চলে গুলিবিনিময়। একপর্যায়ে থেমে যায় পাকবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা নিশ্চিত হন, ওই মুহূর্ত থেকে তারা মুক্ত। বিকাল নাগাদ এলাকা মুখরিত হয়ে যায় জয়ধ্বনিতে। কুমিল্লা ॥ ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে পাকহানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় কুমিল্লা। এদিন ভোরে মুক্তিসেনারা নগরীর চকবাজার, রাজগঞ্জ, টমছমব্রিজ ও গোমতী পাড়ের ভাটপাড়া দিয়ে আনন্দ উল্লাস করে শহরে প্রবেশ করে। তখন রাস্তায় নেমে আসে বিজয় উল্লাসে উদ্বেলিত জনতার ঢল। এ উপলক্ষে জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনসহ জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। বরিশাল ॥ আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বরিশাল নগরিকে পাকহানাদার মুক্ত করে বিজয় পতাকা উড়িয়েছিল বাংলার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের উল্লাসে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ সেøাগানে নগরীর আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছিল। ঝালকাঠি ॥ ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠির ও নলছিটি হানাদারমুক্ত দিবস। এই দিন দুপুর ১২টার মধ্যে পাকহানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে গানবোট যোগে পালিয়ে যায়। রক্তপাতহীন অবস্থায় ঝালকাঠি হানাদার মুক্ত হয়। এ খবর মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে মানুষ মুক্তির আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়ে। নড়াইল ॥ ৮ ডিসেম্বর নড়াইলের লোহাগড়া পাক-হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লোহাগড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে লোহাগড়াকে হানাদার মুক্ত করে। লোহাগড়া মুক্তদিবস উদ্যাপন উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। খাগড়াছড়ি ॥ ৮ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্ত শহর রামগড় হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে অকুতোয়ভয় মুক্তিসেনা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর আক্রমণে পাকহানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয় ও রামগড় ত্যাগ করে। মাদারীপুর ॥ ৮ ডিসেম্বর মাদারীপুরের কালকিনি মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে কালকিনি উপজেলা মুক্ত হয়। এ উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বর দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা প্রশাসন। মৌলভীবাজার ॥ ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী ৭ ডিসেম্বর রাতেই মৌলভীবাজার ত্যাগ করে সিলেটের পথে পাড়ি জমায়। দিবসটি পালন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। চাঁদপুর ॥ ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ৮ ডিসেম্বর ট্যাংকসহ মিত্রবাহিনী চাঁদপুর এসে শত্রুদের ধরতে শুরু করে এবং ট্যাংক থেকে মেঘনা নদীতে কামান আর বিমান থেকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়া ৬ শতাধিক পাকসেনার একটি বিশাল বাহিনীকে মেঘনা নদীতে কবর রচনা করে। ফলে চাঁদপুর হয় মুক্ত। এ শহীদদের স্মরণে চাঁদপুরে নাম সম্মিলিত ‘স্মৃতিফলক’, পানির ওপর দৃশ্যত ভাসমান ‘অঙ্গীকার’, চাঁদপুর শহরের ৪ রাস্তার মোড়ে স্মৃতিস্তম্ভ ‘শপথ’ চাঁদপুর প্রথম ৪ শহীদদের স্মরণে ‘মুক্তিসৌধ’ বড় স্টেশন বদ্ধভূমিতে ‘রক্তধারা’ স্মৃতিভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। পটুয়াখালী ॥ ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পটুয়াখালী শহরকে পাকহানাদার মুক্ত করে লাল সবুজের পতাকা উড়ান পটুয়াখালী স্বাধীনতার সূর্য সন্তানরা। এ সব মুক্তিযোদ্ধরা মারা গেলে হারিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধের এলাকাভিত্তিক ইতিহাস। আর এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের অঞ্চলভিত্তিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা দাবি নতুন প্রজন্মের। স্বাধীনতা যুদ্ধে এসব সূর্য সন্তানদের অনেকেই অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের এসব অঞ্চলভিত্তক ইতিহাস জানাতে এসব মুক্তিযোদ্ধার ওপর প্রামাণ্য চিত্র অথবা লিখিত ইতিহাস সংরক্ষণের দাবি স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের। ভালুকা ॥ আজ ৮ ডিসেম্বর, ভালুকা পাকহানাদার মুক্ত দিবস। দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভালুকা উপজেলা কমান্ডের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচীর মাঝে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মুক্তিযোদ্ধা জনতার বিজয় র‌্যালি, কবর জিয়ারত, শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা। দৌলতপুর ॥ দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর ৮ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর হানাদার মুক্ত হয়। দিবসটি পালনের লক্ষে দৌলতপুর মুক্তিযোদ্ধাগণ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। মোহনগঞ্জ ॥ ৮ ডিসেম্বর মোহনগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের এই দিনে পাকবাহিনীর দখল থেকে মুক্ত হয় মোহনগঞ্জ। দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা হলরুমে আলোচনা ও বিজয় র‌্যালির আয়োজন করেছে।
×