ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ এ্যাকশন- এবার বল হাতে নিষিদ্ধ হাফিজ

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

অবৈধ এ্যাকশন- এবার বল হাতে নিষিদ্ধ হাফিজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপ সামনে রেখে পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য আরও এক দুঃসংবাদ। সাঈদ আজমলের পর এবার অবৈধ এ্যাকশনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন না তারকা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি অনুমোদিত ল্যাবরেটরি ইংল্যান্ডের লুবার্গে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উতরে যেতে ব্যর্থ হন পাক তারকা। রবিবার পরীক্ষার ফল জানিয়ে আইসিসি বিবৃতি দেয়, বোলিংয়ের সময় প্রতিটি ডেলিভারিতেই আজমলের হাতের কনুই নির্ধারিত মাত্রা ১৫ ডিগ্রীর বেশি বেঁকে যায়। তাই এ্যাকশন সংশোধন করে ফের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন না ৩৪ বছর বয়সী ডানহাতি অফস্পিনার। আজমলের মতো হাফিজকেও বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে রাখতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) জোরালো পদক্ষেপ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় পিসিবির মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ফেব্রুয়ারি-মার্চে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে বসবে বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১১তম আসর। দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের লক্ষ্য মিসবাহ-উল-হকদের। তাতে বড় ধাক্কা খেল। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ল্যাবে দেয়া আইসিসির পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধ হন সেনসেশনাল স্পিনার আজমল। যদিও দু’দিন আগে বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ৩০ সদস্যের প্রাথমিক দলে রয়েছেন দুই তারকাই। গত অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের সেরা সব ক্লাব নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ টি২০’র আসর। পাকিস্তান থেকে সেখানে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় লাহোর লায়ন্স। দলটির অধিনায়ক ছিলেন হাফিজ। অসরে প্রথমবারের মতো তাঁর এ্যাকশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু ওই টুর্নামেন্ট আইসিসির অন্তর্ভুক্ত নয় বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার কোন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু গত নবেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবুধাবি টেস্টে ফের হাফিজের বোলিং এ্যাকশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আম্পায়ার। এবার পরীক্ষায় সেটিই প্রমাণ হলো, বল হাতে নিষিদ্ধ হলেন তিনি। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী আম্পায়ার কর্তৃক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ২১ দিনের মধ্যে অনুমোদিত বায়োমেকানিকল্যাল ল্যাবে পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং থেকে নিষিদ্ধ হন অভিযুক্ত বোলার। তবে এ্যাকশন শুধরে যে কোন সময় পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে পুনরায় ফেরার সুযোগ থাকে। দ্বিতীয়বারও ব্যর্থ হলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ হতে হয় (কম পক্ষে ১-২ বছরের জন্য)। দ্বিতীয় শর্তের কথা ভেবেই আইসিসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীলের সাহস দেখাননি হাফিজ সতীর্থ আজমল। সাবেক গ্রেট সাকলাইন মুশতাকের তত্ত্বাবধানে তার পরিচর্যা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে শীঘ্রই আইসিসির চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেবেন। কারণ প্রতিটি দলকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের চূড়ান্ত দল জমা দিতে হবে। হাফিজের বিষয়টা একটু ব্যতিক্রম। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ টি২০তে সন্দেহ সত্ত্বেও তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। বার বারই বলেছেন, জন্মের পর থেকে তিনি এভাবে বল করে আসছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক যুগ হয়ে গেল। সুতরাং এ নিয়ে একদমই মাথাব্যথা নেই। তাই এ্যাকশন সংশোধনে মনোযোগ না দিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ও টি২০তে খেলা চালিয়ে যান। নবেম্বরের শেষ সপ্তাহে লুবার্গে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ও প্রধান নির্বাচক মঈন খান বলেছিলেন, ‘আমরা জানি ওর এ্যাকশনে বড় কোন সমস্যা নেই। আশা করছি এ্যাকশনের বৈধতার সার্টিফিকেট নিয়েই আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে।’ আজমলের নিজের, নির্বাচকের অনুমান ভুল প্রমাণ করে ফেঁসে গেলেন তিনি! হাফিজ কেবল বোলারই নন, দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান আর ফিল্ডারও। আর আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী এ্যাকশনে বৈধতা না এনে কেবল বোলিং করতে পারবেন না। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজে ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে ছিলেন। রয়েছে ৯৬, ১০৮* ও ১৯৭ রানের অসাধারণ ইনিংস। আজমল স্রেফ একজন বোলার, আর হাফিজ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের একজন। সুতরাং শেষ পর্যন্ত তাকে ব্যাটসম্যান হিসেবে রেখেই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল গঠন করা হয় কি না, তা দেখতে অপেক্ষায় থাকতে হবে। ২০০৩ থেকে এ পর্যন্ত ৪০ টেস্ট, ১৪৯ ওয়ানডে ও ৬০ টি২০ খেলে দলের সাফল্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন পাঞ্জাবে জন্ম নেয়া তুখোড় এই অলরাউন্ডার। এ নিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক বোলারের এ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলল আইসিসি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনিল নারাইন, শেন শিলিংফোর্ড, মারলন স্যামুয়েলস, বাংলাদেশের সোহাগ গাজী, আল-আমিন, শ্রীলঙ্কার সচিত্র সেনানায়েকে, নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন।
×