ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকার উৎখাতে একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

সরকার উৎখাতে একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছে

তপন বিশ্বাস ॥ সরকার উৎখাতে একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছে। প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গে অস্থিরতা সৃষ্টি করে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টিতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কতিপয় আমলা। তারই অংশ হিসেবে প্রজাতন্ত্রের কিছু কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বেগম জিয়ার সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক বৈঠক সরকারী কর্মচারী আচরণ-বিধি-১৯৭৯ এর বিধি ২৫, ২৬ ও ২৭ অনুযায়ী দ-নীয় অপরাধ। বৈঠকের বিষয়ে তদন্তে এখনও কোন কমিটি গঠিত হয়নি। আজ-কালের মধ্যে কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি মহাজোট সরকার শপথ গ্রহণের পর থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় বিএনপি-জামায়াত চক্র। শুরুতেই বায়তুল মোকাররমকে ব্যবহার করে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলে। এরপরই ঘটে বিডিয়ার কেলেঙ্কারি। শেখ হাসিনা সরকার সফলতার সঙ্গে এসব সমস্যা মোকাবেলা করলে শুরু হয় সরকার উৎখাতে নানা ষড়যন্ত্র। প্রতিটি ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে শুরু হয় স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঢুকে পড়া। সুনিপুণ দক্ষতার সঙ্গে তারা এ কাজটি সম্পন্ন করে। যে কারণে এখনও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াত-বিএনপিদের আধিক্য রয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষের কর্মকর্তাদের মাথায় ভর করে এরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেয়েছে এবং কর্মরত রয়েছে। এরা সঠিক সময়ের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ঘাপটি মেরে রয়েছে। বিগত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পূর্ববর্তী সহিংস চলাকালে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকর্তারা সচিবালয়ে বৈঠকের আয়োজন করে। কিন্তু এ ঘটনা জানাজানি হওয়া এবং গোয়েন্দা তৎপরতায় তা ভ-ুল হয়ে যায়। এরপর জামায়াত-বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার তাদের অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হতাশ হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনার সরকারের এ আমলের শুরুতে বড় ধরনের কোন কিছু করতে ব্যর্থ হয়ে তারা অনেকটা ভেঙ্গে পড়ে। একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হওয়ায় জামায়াতকেও নীরব দেখা গেছে। অনেকে বলছে তারা বড় ধরনের ঘটনা ঘটাতে হঠাৎ করে নীরব হয়ে পড়েছে। কিন্তু তাদের সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। একের পর এক জঙ্গীদের গ্রেফতার, গোলাবারুদ উদ্ধারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় এবারও ব্যর্থ হয় তারা। সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধ অনুসারী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সরকার তাদের গাত্রদাহের বড় কারণ। এছাড়া সফলভাবে সরকার পদ্মা-সেতুর করতে যাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বিল পাস হলে সরকারের সফল কূটনীতির প্রমাণ মিলবে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর, সার্ক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জ্বালানি চুক্তি ক্রমান্বয়ে দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছে। জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে আনতে সরকার আইন-কানুন পরিবর্তনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ আন্তর্জাতিক সংসদীয় ফোরামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভিশন-২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের দিকে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গী দমন ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার সফলভাবে সম্পাদনের পথে সরকার। বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ১৯৪৭ সালের পর থেকে কোন আমলে সম্ভব হয়নি। শেখ হাসিনার সরকার তা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ এবং বঙ্গোপসাগরে সম্পদ আহরণে ‘ব্লু ইকোনমি’ বাস্তবায়নে সরকার সুচিন্তিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে। জাপান, চীন, ভারত, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রজিল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। সুশাসন, দুর্নীতি প্রত্যাশিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত না হলেও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক সফলতার পাশাপাশি উন্নয়ন ও উৎপাদনের মডেল হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আর্বিভূত হয়েছে। তৎকালীন পাক-মার্কিন ভাষায় তলাবিহীন বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন নয়। বরং পরিসংখ্যান ও উৎপাদন উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয়। সরকারের এত সাফল্য কোনভাবে মানতে পারছে না স্বাধীনতাবিরাধী শক্তি এবং সেই জোটের নেত্রী। সরকারের সাফল্য ঠেকাতে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকর্তারা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হাতে রাখতে চেয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ে নানা ইস্যুতে স্বাধীনতাবিরোধীরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভ্যন্তরীণভাবে তাদের মোকাবেলা করে যাচ্ছে। গত শুক্রবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, আইন তার আপন গতিতে চলবে। কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রামণ হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র জানায়, সরকারী কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না। সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ এর বিধি ২৫ অনুসারে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনৈতিক সংগঠন বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কর্মকা-ে অংশ নিতে পারবেন না। বিধি ২৭ এ বলা আছে কোন গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করে কোন প্রকার অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারবেন না। এছাড়া কোন রকম স্বজনপ্রীতি বা প্রতিহিংসা পরায়ণ না হওয়ার বিষয়েও ২৭ বিধিতে বিধান রয়েছে।
×