ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্সে বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর

ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ৫ বছরে পাঁচ কোটি থেকে সাড়ে আট কোটিতে দাঁড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ৫ বছরে পাঁচ কোটি থেকে সাড়ে আট কোটিতে দাঁড়িয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত পাঁচ বছরে দেশে ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা পাঁচ কোটি বেড়ে সাড়ে আট কোটিতে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, দেশের সব মানুষকে ব্যাংক হিসাবের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সময়ে জিডিপিতে ব্যাংক খাতের অবদান বেড়েছে ৯ শতাংশ। দিন দিন বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে বলেও গবর্নর জানান। ড. আতিউর বলেন, অনেক ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে। এমনকি কোন কোন ব্যাংক ভালো গ্রাহকদের জন্য সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দিচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকৃত অর্থনীতিতে অর্থায়ন করার চেষ্টা করেছি। এ কারণে উন্নত দেশগুলো বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় থাকলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়েনি বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গবর্নর জানান। শনিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে দুইদিনব্যাপী ‘বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্স-২০১৪’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সম্মেলনের আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান বিআইবিএম’র অধ্যাপক ড. শাহ মোঃ আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে ‘২০১৩ সালের ব্যাংকিং কার্যক্রমের পর্যালোচনা’ শীর্ষক উদ্বোধনী গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। এ সময় তিনি ব্যাংক খাতের বিভিন্ন সূচক বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি, ঋণ, ব্যবসা, তারল্য ব্যবস্থাপনা, ইসলামী ব্যাংকিং, ই-ব্যাংকিং, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর আলোচনা করেন। গবর্নর বলেন, ২০০৯ সালে দেশে ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটির মতো থাকলেও ২০১৩ সাল শেষে এর সংখ্যা সাড়ে আট কোটি হয়েছে। দেশের সব মানুষকে ব্যাংক হিসাবের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃঢ়তার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রামে তাদের কার্যক্রম বাড়াচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। ড. আতিউর বলেন, ২০০৮-০৯ সালে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মূলধারার অর্থনীতিতে অর্থায়ন করেছে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকৃত অর্থনীতিতে অর্থায়ন করার চেষ্টা করেছি। এ কারণে উন্নত দেশগুলোর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় থাকলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়েনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি ও ভূমিকার কারণে ব্যাংকিং খাতের কিছু কিছু বড় অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে এ খাতটিকে দ্রুত আধুনিকায়ন করার ফলে। এখন অনলাইনে টাকা ট্রান্সফার, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, অনলাইনে ঋণের তথ্য ও তদারকি সহজতর হয়ে পড়েছে। ড. আতিউর বলেন, অর্থনৈতিক বিনিময় আধুনিকায়নে দেশব্যাপী বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম আইটি সহায়তায় নানা বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- অনলাইনে টাকা ট্রান্সফার, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, অনলাইন ক্রেডিট ইনফরমেশন অ্যান্ড সুপারভাইজরি রিপোর্টিং অন্যতম। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং পদ্ধতিকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ভাল উপকৃত হচ্ছেন। মোবাইল ব্যাংকিং দ্রুতগতিতে উন্নতি সাধন করছে। এতে করে মহিলারা অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে ড. আতিউর রহমান বলেন, দেরিতে হলেও স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচী চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে তরুণরা সঞ্চয়ে আগ্রহী হবে। গবর্নর বলেন, আমরা সব সময় সচেতন রয়েছি প্রকৃতিগত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কর্মসূচী নিয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে সোলার শক্তি, বায়োগ্যাস, ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, সোলার সেচ পাম্প ও ইটভাঁটির ধোঁয়া থেকে পরিবেশ রক্ষার্থে নানা কর্মসূচী। আতিউর রহমান বলেন, সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে ব্যাংকিং সেক্টরের সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনা অপরিহার্য। আর এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিকাশমান দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথাগত দায়িত্বের পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকা-ের দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর বলেন, আমরা আর্থিক খাতে সর্বোৎকৃষ্ট পেশাগত নেতৃত্ব দিতে চাই। টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্যে অর্থনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যত সক্ষমতা বাড়াতে আরও সুচিন্তিত নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশ্বমানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং একই সঙ্গে মানবিক, দরদী ও সহায়তাকারী অনন্য এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর এ জন্যে যে সমস্ত আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া প্রয়োজন তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আন্তর্জাতিক গুসি শান্তি পুরস্কার প্রসঙ্গে গবর্নর বলেন, সম্প্রতি আমি আন্তর্জাতিক গুসি পুরস্কার অর্জন করেছি। দারিদ্র্য বিমোচনে মাঠ পর্যায়ে অর্থনীতিকে সামনে আনার জন্য কাজ করেছি। তবে অর্জিত এই পুরস্কার আমার ব্যক্তিগত নয় বরং এটি সবার সামগ্রিক অর্জন। উপস্থাপিত গবেষণা পত্র বিশ্লেষণে তৌফিক আহমেদ চৌধুরী জানান, বর্তমানে দেশে ৮ কোটি ৫০ লাখ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৩ কোটির মতো রয়েছে স্কুল ব্যাংকিং ও কৃষকের ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০১৩-এর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট সম্পদের পরিমাণ ৮ হাজার বিলিয়ন টাকা, যা এর আগের বছরের চেয়ে ১৩.৮ শতাংশ বেশি। ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার বিলিয়ন টাকা। এরমধ্যে ১৩ শতাংশ গ্রামীণ অর্থনীতির অবদান। ২০১৩ সালে শিল্পায়নে ঋণ বিতরণ করেছে ৩৯ শতাংশ ব্যাংক। তিনি জানান, ব্যাংকগুলোর কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ বাড়ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৩২ শতাংশ। এই ঋণ প্রবৃদ্ধির ফলে কৃষিখাত জিডিপিতে অতিরিক্ত ৫.৭ শতাংশ অবদান রাখতে পারছে কৃষিখাত। বাজেটে তথ্য প্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণবাবদ মাত্র ১ শতাংশ বরাদ্দ অপ্রতুল বলে উল্লেখ করেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ১ম সেশনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর ইব্রাহিম খালিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা ড. মোঃ আক্তারুজ্জামান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বিআইবিএম পরিচালক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদশে ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস.কে সুর চৌধুরী।
×