ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আউটসোর্সিং

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

আউটসোর্সিং

‘আউটসোর্সিং’Ñ শব্দটি ইংরেজী হলেও বাংলা অভিধানে যুক্ত হওয়ার মতোই যেন তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণের ওষ্ঠে বহুল উচ্চারিত এ শব্দটি স্বপ্নের ছবি আঁকছে প্রতিদিন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবহৃত ওই শব্দটির সরল অর্থ হলোÑ অনলাইনে দেশের বাইরের কাজ করে আয় করা। বর্তমানে সারাবিশ্বে আউটসোর্সিংয়ে রয়েছে প্রায় এক হাজার ৫০০ বিলিয়ন ডলারের কাজ। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ শুরু হওয়ার পর অল্প ক’বছরের ভেতরেই বাংলাদেশ প্রযুক্তিভিত্তিক বৈদেশিক ওই শ্রমবাজারে ভাগ বসাতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গার্টনারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্র ইতিবাচকভাবে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ৩০ শীর্ষ আউটসোর্সিং দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। এটি যেমন তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির স্বীকৃতি, তেমনি আত্মকর্মসংস্থানের পথে দেশের তরুণ সমাজের এগিয়ে চলারও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা চার কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আর গত এক বছরেই দেশে এর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪৩ লাখ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে থ্রিজি সেবা চালু হওয়ার পরবর্তী এক বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর ব্যাপারে সরকার সচেতন রয়েছে এবং ইন্টারনেটের ব্যবহারমূল্য কমানোর জন্যও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যথাসম্ভব স্বল্প ব্যয়ে উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য হলেই যে দেশে গ্রাহকের সংখ্যা রাতারাতি বেড়ে যাবে এমন নয়। এর সঙ্গে শিক্ষা বিস্তার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়গুলোও সম্পৃক্ত। আশার কথা হলো, তথ্যপ্রযুক্তির বহুবিধ সুবিধার দিকগুলো এখন ব্যাপকভাবে আলোচিত। তথ্যপ্রযুক্তির আশীর্বাদের তথ্যগুলো এখন গ্রামের অল্পবয়সী শিক্ষার্থীদের কাছেও পৌঁছে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে ঘরে বসে আয়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে তরুণ শক্তি শুধু অবগতই নয়, রীতিমতো তারা এটি কাজে লাগাচ্ছে। প্রাপ্ত নানা পরিসংখ্যানের তথ্য হলো, দেশের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার তরুণ ফ্রিল্যান্সার (স্বাধীন পেশাজীবী) হিসেবে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আউটসোর্র্সিংয়ে। অনিয়মিতভাবেও যুক্ত আছেন বহুজন। তবে ওডেক্স, ইল্যান্স, ফ্রিল্যান্স ডটকমের মতো মার্কেট প্লেসে ইতোমধ্যে নাম নিবন্ধন করে রেখেছেন চার লাখের ওপরে। এই বিপুল পরিমাণ মানবসম্পদকে আউটসোর্সিংয়ের কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ সুফল পেতে হলে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের বিকল্প নেই। সারাদেশে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সেমিনার এবং কর্মশালার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের সরকারী কর্মসূচীটি এখন চলমান। আশা করা যাচ্ছে, এ প্রকল্প থেকে এ ধাপে ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু প্রশিক্ষণ প্রকল্পে জোর না দিয়ে দক্ষতা উন্নয়নেও জোর দিতে হবে। কম্পিউটার শিক্ষা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উপার্জনের জন্য প্রাথমিক শর্ত। বিশ্বের অনলাইন বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কাজের যোগান দিতে হলে সেই কাজগুলো সম্পাদনের যোগ্যতা ও দক্ষতা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে কাজের প্রধান বাহন হলো ইংরেজী ভাষা। ইংরেজী ভাষা চর্চায় পিছিয়ে থাকলে কিভাবে প্রশিক্ষিত তরুণরা প্রযুক্তিভিত্তিক বৈদেশিক শ্রমবাজারে দাপটের সঙ্গে যুক্ত হবে? তাই জরুরি হলো ইংরেজী ভালভাবে শেখা। চীনসহ যেসব দেশ অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি করেছে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালেই সত্যটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা শিক্ষার্থীদের ইংরেজী শিক্ষার ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি প্রকৃত শিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিয়ম করে বিশ্বের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে পাঠাচ্ছে। তাই সুষ্ঠু এবং দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সক্ষম হলেই কেবল আমাদের তরুণ সমাজ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাক্সিক্ষত উপার্জনের মাধ্যমে দেশের চেহারা ইতিবাচকভাবে বদলে দিতে পারবে।
×