ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাইয়ুম-জগ্লুল স্মরণে নাগরিক শোকসভা

শিল্পকর্ম ও লেখনীর মাধ্যমে তাঁরা অসামান্য অবদান রেখে গেছেন

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

শিল্পকর্ম ও লেখনীর মাধ্যমে তাঁরা অসামান্য অবদান রেখে গেছেন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ একজন শিল্পকর্মের মাধ্যমে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতেন। অপরজন লেখনীর মাধ্যমে সত্য প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের দুঃখ-ব্যথার কথা তুলে ধরতেন। দুইজনই ছিলেন অসম্ভব ভাল মানুষ এবং দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে অন্যতম। তাঁদের প্রয়াণে যে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়। শনিবার বিকেলে রাজধানীর গণগ্রন্থাগারের ভিআইপি মিলনায়তনে প্রথিতযশা শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী এবং সাংবাদিক জগ্লুল আহমেদ চৌধুরীর স্মরণে আয়োজিত এক নাগরিক শোক সভায় বক্তারা সদ্য প্রয়াত এই দুই গুণী ব্যক্তি সম্পর্কে এসব মন্তব্য করেন। সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ (বাশিসাসাপ)। সংগঠনের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলী আসগরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ মশিউর রহমান, চলচ্চিত্রকার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মোঃ রফিকুজ্জামান, জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি আসলাম সানী প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী সম্পর্কে বলেন, তাঁর শিল্পকর্মের মধ্যে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতিচ্ছবি ও কথা প্রতিফলিত হতো। সেই কথা আমরা আর কোন দিনই দেখতে পারব না। কিন্তু তাঁর কর্ম, স্মৃতি এবং জীবনদর্শন আমাদের জন্য চির আদর্শ হয়ে থাকবে। তিনি শিল্পের শহীদ, শিল্পে সমাহিত এবং তাঁকে অনুসরণ করবে অমরত্ব। সাংবাদিক জগ্লুল আহমেদ চৌধুরী সম্পর্কে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দেশের সাংবাদিকতা জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি। দেশের সংবাদপত্র এবং সংবাদ সংস্থায় তাঁর মেধার স্বাক্ষর স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করে তিনি বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মৌলিক ধারণাকে নবীন সাংবাদিকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি শুধু দেশের সমাজ ও রাজনীতির ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব প্রকাশ করেন নি, পাশাপাশি একজন দক্ষ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকও ছিলেন। সাংবাদিকতা পেশার উন্নয়ন এবং সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য জাতি তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী সম্পর্কে বক্তারা বলেন, তাঁর হাত ধরেই শিল্পের মাধ্যম মুক্ত হয়েছিল। বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে নতুন করে চিনতে শিখিয়েছেন তিনি। দেশের প্রকাশনা শিল্পকে অন্য একটি মাত্রায় নিয়ে গেছেন। অসাধারণভাবে কাজ করে গেছেন, এই কাজ দিয়ে তিনি সবাইকে মুগ্ধ করে দিতেন। সঙ্গীতের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। সুরের মূর্ছনার মধ্যেই তিনি চলে গেলেন। তিনি অমর। তিনি অমর হয়ে থাকবেন। নিরাপদ সড়কের দাবি জানিয়ে সাংবাদিক জগ্লুল আহমেদ চৌধুরী সম্পর্কে বক্তারা বলেন, তাঁর মতো একজন গুণী ও মেধাবী সাংবাদিককে রাস্তায় গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মরতে হয়েছে এর চেয়ে দুঃখ ও শোকের ঘটনা আর কি হতে পারে। ২৯ নবেম্বর রাতে যেই গাড়িটির চাপায় জগ্লুল আহমেদ চৌধুরী নিহত হন, এর সঙ্গে জড়িতদের হদিস আজও মেলে নি। দ্রুত এদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শোক সভায় এই দুই ব্যক্তির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। উল্লেখ্য, গত ২৯ নবেম্বর শনিবার রাতে রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় গাড়ির নিচে চাপা পড়ে নিহত হন প্রবীণ সাংবাদিক জগ্লুল আহমেদ চৌধুরী। এর পরদিন ৩০ তারিখ রবিবার রাতে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী। ওইদিনই তিনি মারা যান।
×