স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বৈঠকের সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ঘরে বসে মিটিং করে কাজ হবে না। জনগণ আপনাদের পরিত্যাগ করেছে। মানুষ বিএনপিকে ঘৃণা করে। আপনাদের ভোট দেবে না। ক্ষমতায় আসলে রাষ্ট্রীয় কতগুলো মিল, কার কাছে কত টাকায় বিক্রি করেছেন এর হিসাব নেব।
শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’-এর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এরশাদ এসব কথা বলেন। দলের পক্ষ থেকে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এরশাদ বলেন, জেগে ওঠা পার্টিকে নিয়ে ক্ষমতায় এসে নতুন বাংলাদেশ গড়ব। তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর নিয়ে অনেক কথা। কেউ বলে স্বৈরাচার পতন দিবস, আমি বলি সংবিধান সংরক্ষণ দিবস। ক্ষমতায় থাকতে সংবিধানের বাইরে একটি কাজও করিনি। তাই এ দিনটি সংবিধান সংরক্ষণ দিবস হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরকে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হলে সংবিধানের পতন বলতে হবে। তিনি বলেন, আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলন শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ ছিল। প্রশ্ন হলো কেন ক্ষমতা ছাড়লাম? সেদিন আমার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত দুই জোট চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছিল ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দেয়ার। তাদের চ্যালঞ্জ গ্রহণ করতে গিয়ে ক্ষমতা ছেড়েছিলাম। তখন সবার প্রতিশ্রুতি ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের। কেউ কথা রাখেনি। ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন ও বিরোধী দুই দলের জোট সবাই আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ১৯৮৬-৯০ সাল পর্যন্ত শিক্ষিত ও গণতান্ত্রিক সরকার ছিল এমন দাবি করে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, ক্ষমতা ছাড়ার পর সংবিধান ও বিচার বহির্ভূত কাজ শুরু হয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে ফের বিচারপতি হয়েছিলেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ। এজন্য তাঁকে একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এরশাদ রাষ্ট্রপতি হবেন এই আশঙ্কা থেকে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল। গণতন্ত্রকে ভালবেসে নয়, এরশাদকে ভয় করে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সংসদীয় পদ্ধতি আতঙ্কের ফল। আমরা নন্দিত সরকার ছিলাম নিন্দিত নয়। ১৯৯১ সালে জেলে বসে আমিসহ আমার মন্ত্রীরা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলাম। জনপ্রিয়তার ভয়ে দুই দল আমাকে জেলে দেয়।
বিএনপির ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, আমি ক্ষমতা ছাড়ার পর প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। রাজনীতির নামে ছাত্রহত্যা, খুন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সহিংসতা এখন বিদ্যমান। এখন সন্ত্রাস ঘরে ঘরে। মানুষের কাছে সেøাগান হয়েছে, ‘সন্ত্রাস’। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসলে খুন, গুম বন্ধ হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থাকবে না। সন্ত্রাস দূর হয়ে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ ফিরবে।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুনছি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ানো হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের জন্য কিছু করুন। মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে লাভ নেই। দুই রাজনৈতিক দলের হাত থেকে দেশের মানুষ চিরকালের জন্য মুক্তি পেতে চায় এমন মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, কার টাকা কত মিলিয়ন সুইচ ব্যাংকে গেল এর হিসাব চাই। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণের টাকা সেখান থেকে ফিরিয়ে আনুন। মালয়েশিয়ায় কারা বাড়ি কিনেছেন? নাগরিকত্ব পেয়েছেন। সাহস থাকলে তাদের নাম প্রকাশ করুন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, আমরা সুশাসন বিশ্বাস করি। মানুষ মনে করে জাপার জন্ম না হলে দেশের এত উন্নয়ন হতো না। এখনও মানুষ তাদের মুক্তির জন্য, শান্তিতে ঘুমাতে এরশাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি বলেন, ‘আগামী এক জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশে ১০ লাখ মানুষের জমায়েত ঘটিয়ে প্রমাণ করব দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। সবাইকে সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আমাদের টার্গেট ১৫১ আসন। কিন্তু দুই শতাধিক আসন পাবে জাতীয় পার্টি। ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষকে বাঁচার সুযোগ করে দেব। মানুষের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করব। আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নতুন বাংলাদেশ গড়বই।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, এস এম ফয়সাল চিশতী, আবু হোসেন বাবলা, রওশন আরা মান্নান প্রমুখ।