ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণ প্রজন্মকে ফুটবলে উৎসাহিত করছেন আমিনুল-ওয়াহেদ

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪

তরুণ প্রজন্মকে ফুটবলে উৎসাহিত করছেন আমিনুল-ওয়াহেদ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কে বলে বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা নেই? কে বলে তরুণ প্রজন্ম ফুটবল বিমুখ? শুক্রবার রাজধানীর একটি রেস্তরাঁয় যখন এ প্রজন্মের কিছু ফুটবল পাগল কিশোর-তরুণদের মাঝে এসে হাজির হলেন বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বশেষ সুপারস্টার, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অতন্দ্রপ্রহরী অধিনায়ক আমিনুল হক ও জাতীয় দল এবং বর্তমানে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডে যোগ দেয়া প্রতিশ্রুতিশীল ফরোয়ার্ড ওয়াহেদ আহমেদ, তখন তাদের সীমাহীন-বাধভাঙ্গা উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁদের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেয়া এবং তাঁদের সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলতে রীতিমতো প্রতিযেগিতা অনুষ্ঠিত হয়! বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ফেসবুকভিত্তিক ফুটবল সংগঠন রিয়াল মাদ্রিদের বাংলাদেশভিত্তিক গ্রুপ ‘রিয়াল মাদ্রিদ সিএফ লস গ্যালাক্টিকোস’-এর ৫০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাতে আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলাদেশী ফুটবলার আমিনুল ও ওয়াহেদকে। এই সংগঠনের একটি ফুটবল দলও আছে, ‘হোয়াইট ট্রুপার্স সিএফ’ নামে। গত এপ্রিলে জন্ম নেয়া এ ক্লাবের সভাপতি হাসিব নোমানের স্বপ্ন তাঁর ক্লাবটি যেন পাইওনিয়ার ফুটবলের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করা। নাম রিয়াল মাদ্রিদ হলেও ফেসবুকভিত্তিক এ ফুটবল সংগঠনটির এডমিন ও হোয়াইট ট্রুপার্স সিএফের ফরোয়ার্ড মোস্তাফিজুর রহমান প্রান্ত বলেন, তাদের শুক্রবারের এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের ফুটবলকে তুলে ধরা এবং তাদের ফুটবলমুখী করা। অনুষ্ঠানে আমিনুল-ওয়াহেদ রিয়াল মাদ্রিদ লস গ্যালাক্টিকোসের জার্সি উন্মোচন করেন ও কেক কাটেন। এছাড়া হোয়াইট ট্রুপার্স সিএফের প্লেয়ারদের অফিসিয়াল সাইনিং করানো হয়, অধিনায়ক ফরহাদ রাকিব এবং কোচ জাহিদুর রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। প্রজেক্টরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবলের গৌরবমাখা ইতিহাস (১৯৭২-২০১৪) তুলে ধরা হয়। দেখানো হয় আমিনুল হক ও ওয়াহেদ আহমেদসহ দেশীয় ফুটবল কিংবদন্তিদের দুর্লভ কিছু ভিডিও ফুটেজ। সবশেষে রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবের ইতিহাস ও ক্লাবটির কিংবদন্তি ফুটবলারদের ওপর নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে আমিনুল বলেন, ‘আমি ইনজুরির জন্য গত মৌসুম ফুটবল খেলতে পারিনি। ঠিক করেছিলাম এ মৌসুমেই অবসর নিয়ে নেব। কিন্তু এখানে এসে সবার মধ্যে দেশের ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ দেখে ঠিক করেছি আরও কিছুদিন খেলা চালিয়ে যাওয়ার। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে এদেশের ফুটবল ঠিকই আবারও জেগে উঠবে, এগিয়ে যাবে। খেলাধুলাই পারে যুব সমাজকে মাদক ও সন্ত্রাসের কবল থেকে রক্ষা করতে। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাতে সমানভাবে উৎসাহিত করা, সেটা যে খেলাই হোক না কেন।’ নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুর গল্প, অর্জন ও অভিজ্ঞতার গল্পও বলেন আমিনুল। জানান মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের গোলরক্ষক হওয়ার কাহিনী। যা ছিল এদেশের জাতীয় দলের সর্বকনিষ্ঠ গোলরক্ষক হওয়ার রেকর্ড। মজার একটি কাহিনীও বলেন, ‘১৯৯৫ সালে মোহামেডানে খেলি। তখনকার নাইজিরিয়ান কোচ কাদেরিখানা আমাকে বলেছিলেন তিন বছরের মধ্যেই আমি জাতীয় দলে সুযোগ পাব। বিস্ময়কর ব্যাপারÑ তাঁর কথাই ঠিক হয়েছিল!’ আগ্রহ, চেষ্টা, পরিশ্রম মিলে একজন ফুটবলার সবশেষে মনে করিয়ে দেন আমিনুল। ২০০৫ সালে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করা ওয়াহেদ বলেন, ‘আমার স্বপ্ন অন্তত দশ বছর জাতীয় দলে খেলে দেশকে কিছু দেয়া। সবসময়ই চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। কেননা চ্যাম্পিয়ন না হলে কেউ মূল্য দেয় না। ফুটবলার হতে হলে পরিশ্রমী, বিনয়ী, দেশের প্রতি মমত্ববোধ থাকতে হবে। আশা করি আপনারাই একসময় জাতীয় দলে খেলবেন, দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবেন।’ শুক্রবারের সন্ধ্যাটা অনেকদিন হৃদয়ে গেঁথে থাকবে কিশোর-তরুণদের। তারা আমিনুল-ওয়াহেদকে কাছে পেয়ে ফুটবলার হওয়ার যে সুনীল স্বপ্ন দেখেছে, তা যেন বাস্তবে রূপ নেয়, এটাই হোক নিগূঢ় প্রত্যাশা।
×