ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুইডেন বাংলাদেশের উন্নয়নে ২৩ কোটি ডলার দেবে ৬ বছরে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪

সুইডেন বাংলাদেশের উন্নয়নে ২৩ কোটি ডলার দেবে ৬ বছরে

তৌহিদুর রহমান ॥ বাংলাদেশের উন্নয়নে চারটি খাতে সহযোগিতা দেবে সুইডেন। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলা ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন। এসব খাত উন্নয়নে আগামী ৬ বছরে বাংলাদেশে ২৩ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করবে সুইডেন। বাংলাদেশী টাকায় এই অর্থের পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশের উন্নয়নে ২০১৪ থেকে ২০২০ বছর পর্যন্ত সুইডিশ সরকারের নেয়া কৌশলপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। কৌশলপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে সুইডিশ সরকার। ঢাকার সুইডেন দূতাবাস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে সুইডিশ সরকার যে কৌশলপত্র প্রকাশ করেছে, সেখানে প্রধানত চারটি খাতে জোর দেয়া হয়েছে। উন্নয়ন কৌশলপত্রে চারটি খাতে ১১ দফা ঘোষণা করেছে সুইডিশ সরকার। এসব দফায় উল্লেখ করা হয়েছে, গণতন্ত্র শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতে স্বচ্ছতা বৃৃদ্ধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়তা দেবে। এছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বিভিন্ন কর্মসূচীতে সহায়তা দেবে। গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে সুশীল সমাজের সঙ্গেও বিভিন্ন কর্মসূচীতে আর্থিক সহায়তা দেবে। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে প্রধানত দুইটি খাতে অর্থ সহায়তা দেবে সুইডিশ সরকার। এর মধ্যে রয়েছে নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ ও শ্রমবাজার বিকাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংলাপ উন্নয়ন। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় দুইটি খাতে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে, উন্নয়ন কৌশলপত্রে। এতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণ ও প্রত্যন্ত এলাকার জন্য পানি সম্পদ উন্নয়ন করা হবে। কৌশলপত্রে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের বিষয়ে বলা হয়েছে, ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যু হার কমানো, গর্ভবতী মায়েদের সুস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতে জনগণকে সম্পৃক্তকরণ এবং কম্যুনিটিতে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা নিশ্চিত করতে কর্মসূচী নেয়া হবে। কৌশলপত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে ২০০০ থেকে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ৪৯ থেকে ৩২ শতাংশে নেমে আসে। কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। বাংলাদেশের রফতানি উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে পোশাক খাত ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিটেন্সের হার বেড়েছে। পোশাক খাত ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিটেন্স বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান দুটি খাত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে কৌশলপত্রে। সুইডিশ সরকারের কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে অগ্রগতি করলেও এখনও ৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এদের দৈনিক আয় গড়ে মাত্র এক শ’ টাকা। এখানের জনপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনও যথেষ্ট দুর্বল। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিও বিদ্যমান। শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমলেও সামগ্রিক স্বাস্থ্য খাতে এখনও অনেক উন্নয়ন করা প্রয়োজন। কৌশলপত্রে বলা হয়, সুইডিশ সরকার ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশকে বিভিন্ন খাতে অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে। তখন থেকেই বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশ ও সুইডেনের মধ্যে সহযোগিতা দিনে দিনে বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বও বাড়ছে। কৌশলের আওতায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচীতে সুইডেন আগামী ৬ বছরে ওই অর্থ দেবে। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সুইডেন একই ধরনের কৌশলের আওতায় সমপরিমাণ অর্থ দিয়েছে। টেকসই উন্নয়নে জোর দিয়ে কৌশলপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার থেকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে অবশ্যই টেকসই উন্নয়নে জোর দিতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে, নারীর কর্মসংস্থানেও জোর দিতে হবে। শ্রম বাজারে অবাধে নারীদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম বাজারে নারীরা যেন সহজেই প্রবেশ করতে পারে, সে লক্ষ্যে সুইডিশ সরকার বাংলাদেশে নারীদের জন্য কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।
×