ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আরেকটি ধাক্কা দিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে হবে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

আরেকটি ধাক্কা দিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে হবে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন আরেকটি ধাক্কার মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে কল্যাণ পার্টির সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির কারণে দেশ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। টিআইর রিপোর্ট অনুসারে আগে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ১৬তম ছিল, আর এখন ১৪তম হয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ে আমরা হতাশ। মির্জা ফখরুল বলেন, টিআইর রিপোর্টে দেখা যায় দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। অথচ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি বেড়েছে আর দুদক দায়মুক্তি দিয়েছে। দুদক এখন সরকারের বি টিম হিসেবে কাজ করছে। এটি দুর্নীতি দমন কমিশন নয়, দায়মুক্তি কমিশনে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকার দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র হুমকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। এখন ৪৩ বছর পরও চিৎকার করে বলতে হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা নেই। যারা যুদ্ধ করেছেন তারা এমন দেশের কথা চিন্তা করেনি। ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দ্রুত শেষ করতে সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। সেজন্য মামলার আদালতও অন্যায়ভাবে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যান্য হাজার হাজার মামলা পড়ে থাকলেও সেগুলো নিয়ে কোন তাড়াহুড়ো নেই। অথচ গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করা নেত্রীর নামে মিথ্যা মামলা দ্রুত শেষ করার পাঁয়তারা চলছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়ার নামে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েও হতাশ হয়েছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সরকার বিচার বিভাগকে পুরো নিয়ন্ত্রণ করে মামলার রায় দিতে বিচারকদের বাধ্য করছে। বিচার বিভাগের এতোটুকু স্বাধীনতাও নেই। এখন বিচারকরা রায় দেন ওপর মহলের নির্দেশে। তিনি বলেন, এ সরকার স্বৈরাচারী, দেশ ধ্বংসকারী, মানুষের অধিকার ধ্বংসকারী ও গণতন্ত্রহরণকারী। এ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। ফখরুল বলেন, এ স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়ে নোংরা পচে যাওয়া রাজনৈতিক কালচার পরিবর্তন করতে পারে, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে দেশ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ সরকার আন্তর্জাতিকভাবে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশী সব দেশের সঙ্গেই এ সরকারের ভালো সম্পর্ক নেই। বিদেশে মানুষ কাজে যেতে পারছে না। দেশে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের কোন বোধোদয় নেই। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের অপছন্দের লোক হলেই তাকে ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও দলীয়করণ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোক না হলে তাকে চাকরি দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, এ সরকার শুধু সংবিধান ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা একের পর এক গণবিরোধী আইন পাস করে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর দেশে গুম, অপরহণ, মিথ্যা মামলার ভয়ে মানুষ দিশেহারা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনাকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ডেমোক্র্যাটিক লীগ মহাসচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান প্রমুখ। ক্ষমতাসীনরা ‘মিথ্যুক’-মাহবুব ॥ এ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এ সরকার যা বলে তার উল্টো কাজ করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষক দল আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মাহবুবুর রহমান বলেন, এ সরকারের কাছে মানুষের কোন মূল্য নেই। বাংলাদেশে এখন রাজনীতি, অর্থনীতি ও মানুষের বেঁচে থাকার সঙ্কট চলছে। সরকারের কাছে মানুষের মূল্য নেই। দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণে গণতন্ত্রও নেই। গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে জনগণকে বলেছিল, কৃষককে বিনামূল্যে বীজ, সারসহ কৃষি উপকরণ দেবে। কিন্তু তারা দেয় নাই। বরং কৃষককে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম মাস্টার।
×