ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আলোচনা সভায় সন্তু লারমা

সরকার প্রধান সাহসী ভূমিকা নিলেই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

সরকার প্রধান সাহসী ভূমিকা নিলেই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘যদি সরকার প্রধান সাহসী ভূমিকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের নিয়ে এগিয়ে আসেন তাহলে স্বাভাবিকভাবে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত হবে’ -একথা বললেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ নেতা সন্তু লারমা। শান্তিচুক্তি বিরোধীদের সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িক এবং সামন্তবাদী অ্যাখ্যা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) আরও বলেছেন, যারা সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের পক্ষে তাঁরা পার্বত্য শান্তিচুক্তি সর্মথন করবে না। সামরিক ও বেসামরিক আমলাতান্ত্রিকতাকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথে বাধা মনে করে সন্তু লারমা বলেছেন, ‘সশস্ত্র এবং নিরস্ত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। কিন্তু সে চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জুম্ম জনগণ প্রতিনিয়ত শোষিত এবং নির্যাতিত হচ্ছে। এ কারণে ১৭ বছর পরে আবারও আমাদের মনে হচ্ছে সেই অবস্থায় ফিরে যেতে হবে।’ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে বিশেষ শাসন ব্যবস্থায় প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সন্তু লারমা আরও বলেন, ‘পাহাড়ে আন্দোলন এখনও বন্ধ হয়নি। সরকার যদি শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয় তবে আন্দোলনের গতি আরও বাড়ানো হবে। চুক্তি বাস্তবাবায়নে কালক্ষেপণ করা হলে পার্বত্য শান্তিচুক্তি কখনও আলোর মুখ দেখবে না বলে মনে করেন সন্তু লারমা। তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ আর বসে থাকবে না। তারা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হলেই পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ শাসন ব্যবস্থার আওতায় প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে। তবে তার আগে প্রয়োজন নির্বাচিত, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল উদার শাসনব্যবস্থা। ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে অসহযোগ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে হুঁশিয়ারী দেন সন্তু লারমা।’ শান্তিচুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ-এর কড়া সমালোচনা করে সন্তু লারমা বলেন, ‘আমিও চাকমা, প্রসীত খীসা ও চাকমা। প্রসীত খীসা আদিবাসীদের অধিকারের বিরুদ্ধে, শান্তিচুক্তির বিরুদ্ধে। অথচ সচতেনতার কারণে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার কারণে অনেক বাঙালী শান্তিচুক্তির পক্ষে। তাই আদিবাসীদের অধিকারের পক্ষে সব ধর্ম, মতের শান্তিকামী জনগণকে আমরা আমাদের আন্দোলনে পাশে চাই। আমাদের বেদনা উপলব্ধি করে আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ অনুভব করলেই আপনারা বুঝবেন, এদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পার্বত্য এলাকার জুম্ম জনগণের শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা কত জরুরী। এ কারণে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন জরুরী। এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য কমিশনের সাবেক সদস্য সাদেকা হালিম বলেন, দাতাসংস্থা কখনও শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করে দেবে না। দাতাসংস্থা বড় অঙ্কের ডোনেশন দেয়, তাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ করতে হয়। রাষ্ট্রপ্রধানই এ চুক্তির বাস্তবায়ন করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, শান্তিচুক্তি করা এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই আন্তরিক। তৃণমূল পর্যায়ে কিছু জটিলতা এবং যারা কার্যকর করবে তাদের কিছু দুর্বলতার কারণে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ হচ্ছে। সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি এবং কাপিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপরসন রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সভা সমাবেশে বিভিন্ন কথা বললেও শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে তাদের কোন এজেন্ডা কখনই ছিল না; এখনও নেই। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কালক্ষেপণের জন্য রাজনীতিকদের সদিচ্ছার অভাবকে দায়ী করেন রবীন্দ্রনাথ সরেন। আলোচনা সভার ধারণাপত্র তৈরি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে না; সেনাশাসনের বিরুদ্ধে। ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন জনসংখ্যাতাত্ত্বিক রাজনীতি চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এরকম চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে পাহাড়িরা সেখানে সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। পূর্ব-পাকিস্তানীরা এক সময় বাঙালিদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে এখন বাংলাদেশ পাহাড়িদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। নিপীড়িত কিভাবে নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম।’ পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ অসাধারণ মডেল হতে পারত অভিমত প্রকাশ করে রোবায়েত বলেন, ‘শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে এটি বাস্তবায়ন করা যায়নি।’ আদিবাসীদের জন্য সংসদীয় ককাসের সদস্য ঊষাতন তালুকদার এমপি বলেন, সংসদে কথা বলার জন্য খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না। তবু আমি অপেক্ষা করছি, নিশ্চয়ই বিষয়টি সংসদে তুলে ধরব।
×