ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জানা যাবে অফুরন্ত খনিজ সম্পদ সম্ভার মহীসোপানের আয়তন

সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করছে সরকার

তপন বিশ্বাস ॥ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করতে যাচ্ছে সরকার। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত আরবিট্রেশন মামলায় দেয়া রায় কার্যকর করতে দুটি গেজেট নোটিফিকেশনকে একীভূত করে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য একটি নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে। শীঘ্রই এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, এ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সমুদ্রসীমার মোট আয়তন নির্ধারণ করা হবে। এ আয়তনের মধ্যে থাকছে আঞ্চলিক সমুদ্র অঞ্চল, একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল ও উম্মুক্ত সাগর। আঞ্চলিক সমুদ্র অঞ্চলে বাংলাদেশের সার্বভৌম থাকবে, তবে এ অঞ্চলে বিদেশী জাহাজ চলাচল করতে পারবে। এই অঞ্চলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এমনকি বিদেশী জাহাজ চলাচল করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার শুল্ক নির্ধারণ করতে পারবে। এ দু’টি অঞ্চলের বাইরের অংশ সবার জন্য উন্মুক্ত সাগর হিসাবে পরিচিত। এছাড়া বাংলাদেশের প্রাপ্ত সমুদ্রসীমার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত মহিসোপান। যাতে রয়েছে অফুরন্ত খনিজ সম্পদের সম্ভাবনা। এই মহিসোপান মূল ভূখ-েই বর্ধিতাংশ যা সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থিত এবং উন্মুক্ত সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ বিষয়ে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট জারির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং ইতোমধ্যেই গ্রহণের করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনটি এখন জারির অপেক্ষায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমুদ্র সংক্রান্ত সচিব খোরশেদ আলমের দফতরে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সূত্র উল্লেখ করেছে। ১৯৮২ সালের সমুদ্র বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী কোন তীরবর্তী রাষ্ট্র এর সংলগ্ন সমুদ্রে ১২ নটিক্যাল মাইল আঞ্চলিক সমুদ্র, ১২ নটিক্যাল সংলগ্ন অঞ্চল এবং ১৭৫ নটিক্যাল মাইল একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিকারী হয় এবং তটরেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহিসোপানের মালিক থাকে তীরবর্তী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর সমুদ্রাঞ্চলের বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত আঞ্চলিক সমুদ্র অঞ্চল, সংলগ্ন অঞ্চল, একচেটিয়া অর্থনেতিক অঞ্চল এবং মহিসোপানের আয়তন সুস্পষ্টভাবে আইনে স্বীকৃতি লাভ করবে। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলার রায় ॥ ২০১২ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশের পক্ষেই আসে বঙ্গোপসাগরের সীমানা নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার বিরোধ মামলার রায়। জাতিসংঘের সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল (ইটলস) এ রায় দেয়। তিন বছর আইনী লড়াই শেষে বাংলাদেশ তার দাবির চেয়েও বেশি সমুদ্রসীমা পায় এই রায়ের মাধ্যমে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যেখানে বঙ্গোপসাগরে এক লাখ সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার কর্তৃত্ব দাবি করেছিল, সেখানে পেয়েছে এক লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার। এক ঐতিহাসিক রায়ে বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমায় পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। এতে ওই সমুদ্র অঞ্চলে বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদ আহরণের কাজ ত্বরান্বিত হবে। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলার রায় ॥ চলতি বছরের ৭ জুলাই ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলার রায় হয়। নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিশী আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশন-পিসিএ) এই রায় ঘোষণা করে। এই রায়ে বঙ্গোপসাগরের ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটার বিরোধপূর্ণ এলাকার মধ্যে বাংলাদেশ পায় ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার। মামলায় জয়ের ফলে ওই এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অধিকার পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া দুই দেশের সীমান্তের হাঁড়িভাঙ্গা নদীর মোহনার স্থল সীমানা চূড়ান্ত হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অবস্থিত স্থায়ী সালিশী আদালতে ২০১৩ সালের ৯ থেকে ১৮ ডিসেম্বর সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পক্ষে বাংলাদেশ ও ভারত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। শুনানি শেষে আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, কার্যবিধির ১৫ ধারা অনুযায়ী ছয় মাস পর এই দুই নিকট প্রতিবেশীর সমুদ্রসীমা নির্ধারণের রায় দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ সমুদ্র আইন কনভেনশনের বাধ্যবাধকতামূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সমুদ্রসীমা বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তির উদ্দেশে সাহসী, দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী রাষ্ট্রাধীন অঞ্চলে একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে এবং মহীসোপানের সমুদ্র সীমানা নির্ধারণের উদ্দেশে জাতিসংঘ সমুদ্র আইন কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সালিশী ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমার ও ভারতের অনুকূলে সালিশী নোটিস প্রদান করে।
×