ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠানে হাসিনা-রাজাক ঐকমত্য

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠানে হাসিনা-রাজাক ঐকমত্য

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদারের লক্ষ্যে যৌথ কমিশনের বৈঠক আহ্বানের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। বুধবার পুত্রজায়ায় অবস্থিত সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সেন্টার অব ফেডারেল এডমিনিস্ট্রেশন অব মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে এই মতৈক্য হয়। বৈঠকে সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নাজিব বিন তুন আব্দুল রাজাক নিজ নিজ পক্ষের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। উভয় দেশের মন্ত্রিবর্গ এবং সিনিয়র কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, বৈঠকে যৌথ কমিশনের বৈঠক আহ্বান এবং দুই দেশের মধ্যে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ)-এই দু’টি ইস্যুতে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০১৫ সালে যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। গত ২০০৫ সালে ঢাকায় যৌথ কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে আলোচিত তিনটি প্রধান ইস্যুর মধ্যে ছিল- ব্যবসাবাণিজ্য, মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের বিষয় ও বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ। আলোচনায় এ বিষয়গুলোই সবচেয়ে গুরুত্ব পায়। বৈঠকে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তাঁর দেশ এই সম্পর্ককে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে চায়। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন ধরনের বিরক্তিকর কিছু নেই। সুতরাং আমরা এই সম্পর্ককে একটি নতুনমাত্রা দিতে পারি।’ শহীদুল হক বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ মালয়েশিয়াকে দীর্ঘমেয়াদী এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য চাপ দেয়। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এই ইস্যুতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে এ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা শুরু করেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশী পণ্য বিশেষ করে ওষুধ, পাটজাত পণ্য, সিমেন্ট ও পাদুকার কোটা ও শুল্ক মুক্তির পরিধি বাড়ানোর জন্য মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশী শ্র্রমিকদের কাজের ব্যাপারে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশী শ্রমিকদের আন্তরিক সেবার কারণেই মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার শ্রমিক নিয়োগে সম্মত হয়েছিল। যার সূচনা হয়েছিল প্রথম মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশে-প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিক প্রেরণ এবং ডাটাবেজের মাধ্যমের এই শ্রমিকদের রেকর্ড সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শিক্ষা খাতে সহায়তা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যে নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে তার ভিত্তি রচিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক মালয়েশিয়া সরকারের মাধ্যমে। তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব বিন তুন আবদুল রাজাকের পিতা আবদুল রাজাক হোসেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ভারসাম্য মালয়েশিয়ার দিকে থাকার প্রেক্ষাপটে উভয় দেশ এই বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এই বাণিজ্য ব্যবধান হ্রাসে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণেও সম্মত হন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন যে, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশী কাজ করছে- যার বেশির ভাগই নির্মাণ ও কৃষি কাজে নিয়োজিত। তিনি বলেন, তাঁর দেশ কৃষি কাজে আরও শ্রমিক নিয়োগে প্রস্তুত রয়েছে।
×