ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৪ জানুয়ারি মুজাহিদের আপীল শুনানি শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

১৪ জানুয়ারি মুজাহিদের আপীল শুনানি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত যুদ্ধকালীন সময়ের আলবদর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপীলের শুনানি শুরুর জন্য আগামী ১৪ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন সুপ্রীমকোর্ট। বুধবার প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। বুধবার আপীল বিভাগের ১ নম্বর বেঞ্চের কার্যতালিকার ১ নম্বরেই ছিল মুজাহিদের আপীল মামলাটি। তার পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন এবং রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি ছাড়া বেঞ্চের অন্য চার বিচারপতি হলেনÑ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এই বেঞ্চেই জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপীল শুনানি হয়েছিল। আপীল দায়েরের ক্রম অনুসারে মুজাহিদের আগেই গোলাম আযম ও বিএনপি নেতা আব্দুল আলিমের মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে তাদের মৃত্যুর কারণে এগিয়ে আসে মুজাহিদের মামলা। গত ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেয়া মৃত্যুদ-ের আদেশের বিরুদ্ধে ১১ আগস্ট এই আপীল দায়ের করেন মুজাহিদ। রাষ্ট্রপক্ষ আপীল না করলেও শুনানিতে অংশ নিয়ে দ- বহাল রাখতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। বাঙালীর স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করতে সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা-নির্যাতনের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলকে মৃত্যুদ- দেন ট্রাইব্যুনাল। অপহরণ, নির্যাতন, হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি ঘটনায় মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার আদেশ দেয়া হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেন, এ আসামির মৃত্যুদ- দেয়া না হলে ন্যায়বিচার হবে না। মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীকে সহযোগিতা করতে গঠিত আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন এবং ওই বাহিনীর ওপর তার ‘কার্যকর নিয়ন্ত্রণ’ ছিল বলেও উঠে আসে ওই রায়ে। মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়। প্রথম অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপরণের পর হত্যা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয় এই জামায়াত নেতাকে। একই রায় হয় সপ্তম অভিযোগে, ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায়। এছাড়া পঞ্চম অভিযোগে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, গেরিলা যোদ্ধা জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে শাফি ইমাম রুমি, বদিউজ্জামান, আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ও মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদসহ কয়েকজনকে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে আটকে রেখে নির্যাতন এবং জালাল ছাড়া বাকিদের হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য মুজাহিদকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদ-। আর তৃতীয় অভিযোগে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুরের রণজিৎ নাথকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদ- দেয়া হয় মুজাহিদকে। তবে দ্বিতীয় অভিযোগে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে হিন্দু গ্রামে গণহত্যা এবং চতুর্থ অভিযোগে আলফাডাঙ্গার আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও তাতে মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এ দুটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগের একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেফতার করার পর ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ২১ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মুজাহিদের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়।
×