ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

গণগ্রন্থাগার সেমিনার কক্ষে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

গণগ্রন্থাগার সেমিনার কক্ষে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ’৬৫ বছরের লেখালেখি জীবনে যখন ভুল ইতিহাস দেখি, পড়ি, তখন তা আমাকে বড় পীড়া দেয়। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর নোবেল পুরস্কার বিষয়ে নানা অপপ্রচার রয়েছে। বিভ্রান্তি রয়েছে। আমার দৃষ্টিতে যা যৌক্তিক মনে হয়েছে, তথ্য ও প্রমাণযোগ্য মনে হয়েছে, তা নির্মোহভাবে তুলে ধরেছি এই গ্রন্থে। লন্ডনে ইংরেজী ‘গীতাঞ্জলি’র প্রকাশ যদিও ১৯১২ সালের নবেম্বরে, প্রকৃতপক্ষে এর জনপ্রিয় যাত্রা ১৯৯৩ সালের মার্চের বিখ্যাত ম্যাকমিলান কোম্পানির পাখায় চড়ে। বিস্ময় ঘটনা হলো আট মাসে এ চটি বইটির দশম সংস্করণ প্রকাশ এবং এক বছরে প্রায় ২০ হাজার কপি বিক্রি, তখনকার সাহিত্য ভুবনে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা হিসেবে বিবেচ্য। দ্বিতীয় বিস্ময়, ১৯১৩ সালের ১৩ নবেম্বর এ চটি বইটিকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো। জীবনের শেষ দশকে রবীন্দ্রনাথের নান্দনিক সৃষ্টিকর্মে যত পরিবর্তন ঘটুক না কেন, জীবনের আকাক্সিক্ষত ধন ও শ্রেষ্ঠ ধনগুলোকে তিনি অবহেলায় হারিয়ে যেতে দেননি। সেগুলোকে কুড়িয়ে নিয়ে সঞ্চিত ধন অবশেষে মৃত্যুকে উপহার দিয়েছেন। আর এ সব কিছুরই সূচনা ‘গীতাঞ্জলি’ ও নোবেল পুরস্কারের দানে। সে দানের অবশেষ পরিণামে তাঁর জীবন ভরে উঠেছিল অমৃত্যের স্পর্শে। এই পুরস্কার দেয়ার পেছনে নানা স্রোতের টানাপোড়েন, এর পূর্ব প্রেক্ষাপট, কবির স্বদেশে ও বিদেশে পুরস্কারের প্রতিক্রিয়া এবং বাংলা ও ইংরেজীতে গীতাঞ্জলির বিচার, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর অনুবাদসহ বিচিত্র ঘটনার প্রকাশ পেয়েছে আমার লেখা ‘রবীন্দ্রনাথ, ‘গীতাঞ্জলি’ ও নোবেল পুরস্কার’ বইটিতে। গীতাঞ্জলি ও নোবেল পুরস্কার নিয়ে ঘটন-অঘটনের কিছু সংক্ষিপ্ত ইতিকথা ও প্রতিক্রিয়া, ভাল-মন্দ সংক্ষিপ্ত বয়ানে তুলে ধরার চেষ্টাবাক হচ্ছে ছোটখাটো আয়তনের এ বইটিতে’-নিজের লেখা ও নিজের জীবনী নিয়ে লেখা গ্রন্থ দুটির প্রকাশনানুষ্ঠানে এ কথা বলেন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক। ‘রবীন্দ্রনাথ, গীতাঞ্জলি ও নোবেল পুরস্কার’ বইটি লিখেছেন ভাষাসৈনিক, রবীন্দ্র গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কবি আহমদ রফিক, এদিকে তাঁর ৮৫ বছরের কর্মময় জীবন ও পথচলা, যে পথচলা এখনও অবিরত, সে বিষয়ে ‘আহমদ রফিকের পথচলা’ বইটি লিখেছেন প্রাবন্ধিক রইস উদ্দিন ভূঞা। গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে বুধবার বিকেলে এক প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করে বই দুটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ। এতে সভাপতিত্ব করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনা করেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল এবং জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। এ আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন ‘আহমদ রফিকের পথচলা’ গ্রন্থটির লেখক রইস উদ্দিন ভূঞা। অন্যপ্রকাশের অন্যতম পরিচালক আবদুল্লাহ নাসেরের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশনা উৎসবের সূচনা হয়। এরপর বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ শামসুল হক বলেন, আহমদ রফিক প্রচার মাধ্যমে উপেক্ষিত। এ উপেক্ষা, এ অবহেলা বড় অন্যায় আচরণ। তাঁর মতো প্রাজ্ঞ, জ্ঞানী লেখক আমাদের সমাজে বিরল। রবীন্দ্রনাথে নিমজ্জিত এ লেখক উৎকৃষ্ট গবেষক শুধুই নন, কবি হিসেবেও তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। লেখক রইস উদ্দিন ভূঞা তাঁর লেখা বইটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আহমদ রফিকের পথচলা’ বইটি এক অর্থে আহমদ রফিকের জীবনী। এখানে তাঁর জন্ম, লেখাপড়া, সাহিত্যচর্চা, মার্কসবাদী দর্শনবোধ এবং বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা স্থান পেয়েছে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত আহমদ রফিকের প্রথম প্রবন্ধ ‘শিল্প-সংস্কৃতি জীবন’ বইয়ের পরিচিতি, তাঁর স্বাদেশিকতাবোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতীয়তাবোধ, তাঁর কবিতা ও গল্প নিয়ে কিছু কথা রয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে তাঁর গবেষণাধর্মী লেখার পরিচিতিসহ রয়েছে সমাজ ও সম্প্রীতি নিয়ে তাঁর ভাবনার সংক্ষিপ্ত আলোচনা। রয়েছে চিকিৎসক হিসেবে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন, বাংলাদেশে সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে লেখার ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা। মোদ্দা কথা এই বইয়ে আহমদ রফিকের পরিচিতিমূলক আলোচনা এবং তাঁর কর্ম, স্বভাব বৈশিষ্ট, সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা ঠাঁই পেয়েছে বইটিতে। ফয়জুল লতিফ চৌধুরী আহমদ রফিকের লেখা ‘রবীন্দ্রনাথ ‘গীতাঞ্জলি’ ও নোবেল পুরস্কার’ বইটি প্রসঙ্গে বলেন, রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ বইয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রকাশ পেয়েছে আহমদ রফিকের লেখা এই বইটিতে। তিনি আজ ৮৫ পেরিয়ে ৮৬ বছরে পা দিয়েছেন। জীবনের অত্যন্ত পরিণত বয়সে এসে তিনি অনেক কষ্ট করে এ বইটি লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পেছনের অনেক অজানা তথ্য আমরা বইটি পড়লে জানতে পারব। সুলতানা কামাল রইস উদ্দিন ভূঞার লেখা ‘আহমদ রফিকের পথচলা’ বইটি সম্পর্কে বলেন, রফিক ভাইকে নতুন করে জানার কিছুই নেই। যারা তাঁর বই পড়েন তারাই সব জানেন। বইটিতে রইস ভাই রফিক ভাইয়ের প্রতি প্রগাঢ় এক ভালবাসা থেকেই লিখেছেন। বইটি হাতে নিলে বোঝা যাবে, রফিক ভাই কেমন। এতে যেন সব ছবির মতো ফুটে উঠেছে। সমাজের বৈষম্য, অসঙ্গতি ও রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর নানা মন্তব্য এ বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। বেঙ্গলে ভারত-বাংলাদেশের শিল্পীদের যৌথ চিত্র প্রদর্শনী ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের ৩৫ জন শিল্পীর ৩৫টি শিল্পকর্ম নিয়ে ধানম-ির বেঙ্গল গ্যালারিতে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ‘মনক্রোম’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সংগ্রহ থেকে নির্বাচিত এ চিত্রকর্মের শিল্পীরা হলেন-শিল্পী আমিনুল ইসলাম, আনিসুজ্জামান, বিজন চৌধুরী, চিন্ময় রায়, দেওয়ান মিজান, ঢালী আল মামুন, দিলারা বেগম জলি, হাশেম খান, জামিল আকবর শামিম, যোগেন চৌধুরী, কালিদাস কর্মকার, কাজী গিয়াসউদ্দীন, লালু প্রসাদ সাউ, মাহবুবুর রহমান, মাহমুদুল হক, মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান, মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, মোহাম্মদ কিবরিয়া, মনিরুল ইসলাম, মুর্তাজা বশীর, নাসিম আহমেদ নাদভী, কাইয়ূম চৌধুরী, কামরুল হাসান, রফিকুন নবী, রোকেয়া সুলতানা, রনি আহমেদ, সফিউদ্দীন আহমেদ, শহিদ কবির, শেখ আফজাল হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, সুখময় মজুমদার, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, ওয়াকিলুর রহমান, ইয়াসমিন জাহান নুপুর ও জয়নুল আবেদিন। প্রদর্শনী আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
×