ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নবায়ন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নবায়ন হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ আগামী ১০ বছরের জন্য ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এই চুক্তি নবায়নের আওতায় ভুটান থেকে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত ও পদ্মা সেতু নির্মাণে বোল্ডার আমদানি করার সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশ থেকে রফতানি হবে তৈরি পোশাক, ওষুধ, মেলামাইন ও ফলের জুসসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। আগামী ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এ লক্ষ্যে ওই দিনই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগেসহ ১০ সদস্যসের একটি বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তাঁর নিজস্ব কার্যালয়ে এই চুক্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের পাশাপাশি সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সড়কপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে জোটের দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া মোটর ভেহিকলস এগ্রিমেন্ট এর খসড়ায় ওই সময় এ অনুমোদন দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ‘এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড বিটুইন দ্য রয়্যাল গবর্নমেন্ট অব ভুটান এ্যান্ড দ্য গবর্মেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই চুক্তিতে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ কমিটি গঠন করা, চুক্তির বিধান সংশোধন করা, বাণিজ্যিক তথ্য বিনিময়, পরস্পর মেলায় অংশগ্রহণ, দুই দেশের বাণিজ্য সংগঠনের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কোন দেশ কোন কোন পণ্যসামগ্রী রফতানি করতে পারবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজ কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে। এই নবায়নের ফলে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়বে। বিশেষ করে ভুটান থেকে বোল্ডার ও বিদ্যুতসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আমদানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ থেকেও তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন সামগ্রী রফতানি হতে পারে। এছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণে বিপুল পরিমাণ পাথরের প্রয়োজন রয়েছে। ভুটান ইতোমধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পাথর রফতানির সুযোগ চেয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভুটানকে এই সুবিধা দিতে ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করা হয়েছে। জানা গেছে, সেবা খাত বাদ দিয়ে কোন ধরনের সংশোধনী ছাড়াই ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য-সংক্রান্ত একটি চুক্তি ও একটি প্রটোকল রয়েছে, যা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটান সফরের সময় সই করেন। পাঁচ বছর মেয়াদী ওই চুক্তি ও প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৭ নবেম্বর। তবে এবার পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তি নবায়ন করা হলেও এমন একটি বিধান রাখা হয়েছে যাতে কোন দেশের আপত্তি না থাকলে তা ১০ বছর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে উভয়পক্ষ সংশোধনী সাপেক্ষে বাণিজ্য চুক্তি ও এ সংক্রান্ত প্রটোকল নবায়নে সম্মত হয়। পরে চুক্তির সংশোধনীতে পণ্য খাতের পাশাপাশি সেবা খাত অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদ্যমান চুক্তিতে সেবা খাত যুক্ত করার জন্য চিঠি দেয়া হয় ভুটানকে। ওই চিঠির জবাবে ভুটান জানিয়েছে তারা বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তিতে সেবা খাত অন্তর্ভুক্ত না করে এ বিষয়ে পৃথকভাবে চুক্তি করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ১৯৮০ সালে ১০ বছর মেয়াদে প্রথম বাংলাদেশ-ভুটান বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদিত হয়, যা ২০০০ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকে। পরে ২০০৩ সালে চুক্তিটি নবায়ন করা হয়। ওই চুক্তিতে শিডিউল এ ও বি অনুযায়ী ৯০টি পণ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্য করার বিষয় উল্লেখ করা হয়। সে অনুযায়ী ভুটান বাংলাদেশকে ৯০টি পণ্যে এবং বাংলাদেশ ভুটানকে ১৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দুই দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৪ দশমিক ৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে ভুটান বাংলাদেশে ২২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করলেও বাংলাদেশের রফতানির হচ্ছে ১ দশমিক ৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবার বাংলাদেশ ভুটান থেকে পাথর ও বোল্ডার আমদানি করবে। এছাড়া ভুটান থেকে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। বোল্ডার পদ্মা সেতু নির্মাণে কাজে লাগানো হবে।
×