ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পানি বণ্টন এবং সীমান্ত চুক্তি বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নীতির ফসল

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

পানি বণ্টন এবং সীমান্ত চুক্তি বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নীতির ফসল

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ৩ ডিসেম্বর ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেম ও সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার ফসল পানি চুক্তি, ছিটমহল বিনিময় চুক্তি ও স্থলসীমান্ত চুক্তি। ’৭৪ সালের ৬ মে এই চুক্তি সংসদে পাস করার পর বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে জনক্ষোভ তৈরি করতে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র একে ভারতের সঙ্গে ২৫ বছরের কথিত গোলামি চুক্তি হিসেবে অপ্রপ্রচার করেছিল। ভারতের বিরোধী কংগ্রেস ও ভারতের সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জনপ্রিয়তা হ্রাস করতে এই চুক্তি সম্পর্কে জনগণের সামনে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা অপপ্রচার করেছিল। সেই বিরোধী দলই ’৭৪ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আলোকে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি, তিস্তা পানি চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে। দীর্ঘ পরিক্রমায় দুই দেশই ধাপে ধাপে একটু একটু করে ’৭৪ ৬ মে মুজিব ইন্দিরা চুক্তি আলোকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সকল অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে একটি সমঝোতায় আসতে পেরেছে। ’৭৪ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি আজ চুড়ান্ত বাস্তবায়নের পথে। এই চুক্তি দ্রুত কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এই চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগে উত্তরাঞ্চলসহ বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির কর্মীদের মধ্যে হতাশা জেঁকে বসেছে। এই চুক্তি সম্পর্কে অপ্রপ্রচার থাকায় জনপ্রিয় আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় আসতে ২১ বছর সময় লাগে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ’৭৪ সালের ৬ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনা করে দু’দেশের সীমান্ত সমস্যা ও স্বার্র্থরক্ষায় এই চুক্তি করেন। যা ’৭৪ মুজিব ইন্দিরা চুক্তি নামে পরিচিত। চুক্তিটি বাস্তবায়নে খুব দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হয়। ফলে বাংলাদেশ ভারতের কাছে বেরুবাড়ী নামের একটি ভূখ- ছেড়ে দেয়। যার বিনিময়ে ভারত তিন বিঘা করিডর (ভারতের ভূ’খ-) ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। সদ্যস্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ সরকারের সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নে ’৭৪ সালে ৬ মে বিল) পাস করেন। ফলে ভারতের কাছে বেরুবাড়ী ছেড়ে দেয়া হয়। এ চুক্তি নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীচক্র গভীর ষড়যন্ত্র করতে থাকে। ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে ভারত সরকার ও নাগরিকরা যখন উৎসবমুখর, বঙ্গবন্ধুর পরিবার যখন তার দুই পুত্র সন্তানের বিয়ে দিয়ে নতুন পুত্র বধূদের নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই। বিপথগামী সেনা সদস্যরা স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করে। ইনডেমনিটি আদেশ জারি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে রাখে। মুজিব ইন্দিরা চুক্তি সম্পর্কে অপপ্রচার করে। এই চুক্তিকে বাংলাদেশ বিক্রি ও ভারতের সঙ্গে গোলামি চুক্তি হিসেবে অপপ্রচার চালায়। টিভি ও বেতার নেটওয়ার্ক এতো তৃণমূল পর্যায়ে ছিল না। তাই শ্রোতা-দর্শক ছিল না। মানুষের আর্থিক উন্নয়ন ছিল না। মানুষ শিক্ষিতও ছিল না। তাই বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে সর্ম্পক নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীরা অপপ্রচার সফল করতে পেরে ছিল। ১৯৮৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ দেশে ফিরে আসেন। তিনি ৮৬’র সাধারন নির্বাচনে অংশ নেন। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে ভুমিকা রাখে। তিনিই প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ৭৪’র মুজিব ইন্দিরা ছিটমহল বিনিময় সম্পর্কে কথা বলেন। এই ছিটমহল বিনিময় বিলের আলোকে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে অবস্থিত ভারতের অভ্যন্তরে থাকা দহগ্রাম আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের জন্য ভারতের তিন বিঘা করিডোরটি দাবি করেন। তিনি ’৮৬ সালে দহগ্রাম ছিটমহলে গিয়ে ছিটমহলের বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ পানি পানের সমস্যা সমাধানে ছিটমহলের ৫০টি নলকূপ বিতরণ ও নলকূপ স্থাপনের খরচ বহন করেন। ভারত সরকার সেই দিন ভারত নিয়ন্ত্রিত করিডর দিয়ে দহগ্রাম আঙ্গপোতা ছিটমহলেযেতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। বরং তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেই দিনই ভারত তিন বিঘা করিডর ব্যবস্থা চালুর মৌন সর্মথন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি ’৯২ সালের ২৬ জুন ’৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আলোকে তিন বিঘা করিডর দিনেরবেলা এক ঘন্টা পর পর খোলা রাখার জন্য ভারত সরকারের কাছে স্বীকৃতি আদায় করেন। এই ঘটনাটি আওয়াম লীগের রাজনীতিতে শাপে বর হয়ে যায়। যারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ’৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিকে দেশ বিক্রয়ের চুক্তি, ভারতের সঙ্গে গোলামী চুক্তি হিসেবে অপপ্রচার করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। তারাই ক্ষমতায় গিয়ে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি ব্যবহার করে করিডর চালু করেন। এই চুক্তির ২৫ বছর হয়ে যায়। ভারত সরকারও মুক্তিযুদ্ধের ব্যয়নির্বাহ করতে তার দেশের জনগণের কাছে ট্যাক্স আদায়ের ২৫ বছরও শেষ হয়ে যায়। ফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির নৌকার পালে হাওয়া লেগে যায়। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। সেই হতে তিস্তা চুক্তি, ছিটমহল বিনিময় চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে আবারও ভারতের সঙ্গে কথা হয়। ’৭৪ সালের মুজিব -ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে কথা হয়।
×