ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উগ্রজাতীয়তাবাদীদের তোপের মুখে জাপানের সাংবাদিক

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

উগ্রজাতীয়তাবাদীদের তোপের মুখে জাপানের সাংবাদিক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানের রাজকীয় সেনাবাহিনী কোরিয়ার নারীদের পতিতালয়ে কাজ করতে বাধ্য করেছিল কী না সে বিষয়টি নিয়ে তথ্যানুসন্ধান করেছেন আসাহি শিম্বুন পত্রিকার অনুসন্ধানী রিপোর্টার তাকাশি উয়েমুরা। তিনি যখন প্রতিবেদনটি রচনা করেন তখন তার বয়স ছিল ৩৩ বছর। আসাহি শিম্বুন এখন জাপানের দ্বিতীয় বহুল প্রচারিত দৈনিক। ‘ওই ঘটনার স্মরণ এখনও চোখ অশ্রুসজল করে’ শিরোনামে উয়েমুরার সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর বয়স এখন ৫৬ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানী সেনাবাহিনীর যৌনদাসী কেলেঙ্কারি নিয়ে এটা ছিল প্রথম কোন অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর প্রায় সিকি শতাব্দী অতিবাহিত হয়েছে। উয়েমুরা এতদিনে কর্মজীবন থেকে অবসরগ্রহণ করেছেন। অবসর নিলেও তিনি নিশ্চিন্ত মনে সময় পার করতে পারছেন না, কারণ তিনি এখন দেশটির ডানপন্থী রাজনীতিকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। ট্যাবলয়েডগুলো তাঁকে চিহ্নিত করেছে একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে যিনি কোরিয়ার মিথ্যার ঢোল বাজচ্ছেন। তাঁকে হুমকিও দেয়া হচ্ছে। তিনি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতার একটি চাকরি হারানোর পর ফের আরেকটি চাকরি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। কেবল উয়েমুরাকে নয় উগ্রজাতীয়তাবাদীরা তাঁর সন্তানদের পর্যন্ত নিশানা করেছে। তারা ইন্টারনেটে আহ্বান জানাচ্ছেন উয়েমুরার কিশোরী মেয়েটি যেন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়, মানুষ যেন সামাজিক সাইটগুলোতে সে ধরনের প্রচারণা শুরু করে। ডানপন্থী রাজনীতিবিদ থেকে গণমাধ্যম সবাই এখন উয়েমুরাকে টার্গেট করেছেন। দৈনিকটির প্রতি জাপানের রক্ষণশীলদের ঘৃণা দীর্ঘদিনের। তবে সম্প্রতি যে ধরনের প্রচারণা শুরু হয়েছে, তা যেন যুদ্ধ পরবর্তী জাপানের ইতোপূর্বেকার সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। রক্ষণশীলদের প্রচারণায় শামিল আছেন স্বয়ং জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে পর্যন্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানী সৈন্যরা কোরীয় নারীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার জন্য দেশটি ১৯৯৩ সালে যে দুঃখ প্রকাশ করেছিল বর্তমানে রক্ষণশীল মহল সেটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। উয়েমুরা বলেছেন, ‘তাঁরা আমাদের এমনভাবে ভীতি প্রদর্শন করেছেন যেন আমরা ইতিহাস অস্বীকার করতে বাধ্য হই।’ উত্তরাঞ্চলীয় সাপেরো শহর থেকে নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি এ কথা বলেছেন। জাপানের মিডিয়ার বর্তমান এ প্রচার যুদ্ধকে ‘আসাহির বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। শুরুটা হয়েছিল এ বছর আগস্ট মাসে। জনসাধারণের সমালোচনার জবাবে পত্রিাকাটি তখন ১৯৮০ ও ৯০ এর দশকের অনেকগুলো নিবন্ধ প্রকাশ করে যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানী সৈন্যদের কর্মকা-ের বিবরণ ছিল। এক নিবন্ধে সেইজি ইয়োশিদা এক জাপানী সৈন্যের স্বীকারোক্তি ছিল যে, তিনি কোরীয় নারীদের অপহরণে সহায়তা করেছিলেন। অক্টোবরে পার্লামেন্টে আবে বলেছিলেন, আসাহির প্রকাশিত নিবন্ধ বহু জাপানীর মনকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×