ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিশার স্বপন

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

নিশার স্বপন

“নিশার পাপড়ি ঢেলে ফুলেরই গন্ধ, তার মাঝে মিশে যদি পাখির আনন্দ, যে মধুর সৌরভ হয়, প্রেম ওগো তারে কয়”Ñ সেই প্রেমের টানে হিমালয় পর্বত পেরিয়ে আনন্দলহরী নিয়ে এসেছিলেন তিনি এই বঙ্গে। ছড়িয়ে দিলেন নিশার স্বপন দুঃস্বপ্নের ভেতর বসবাসরতদের অন্দর মহলে, অন্তর মহলে। পথহারা পথিকেরে মসনদসহ রাজপ্রাসাদ প্রাপ্তির স্বপ্ন তুলে ধরার সে এক দুর্বোধ্য প্রচেষ্টার দৃশ্যপট মঞ্চায়ন করে গেলেন। পৃথিবীর অন্য গোলার্ধের ক্ষমতাধর বাসিন্দাটি বাংলার ভাগ্যাকাশ ও ললাটে নতুন উৎপাত ও সংঘাতের দ্বারোদ্্ঘাটন করার পাঁয়তারায় অনাহূতভাবে সফর করে গেলেন। বলে গেলেন কত কী। দেখা-সাক্ষাত তার সীমিত ছিল। গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা, অহিংসার বিপরীতে যারা ধ্বংসের জয়গান গেয়ে চলেছেন, তাদের সেসব কর্মে ‘বিদ্রোহ-বিপ্লবের’ জিলাপি-বাতাসা বিতরণ করে গেলেন। ক্ষমতাসীনদের হাত থেকে দেশকে ‘উদ্ধার’ করার ফর্মুলা নিয়ে বেশ বাতচিতও চালালেন। আর পথকলিরা তাদের দুঃখ-কষ্ট-বেদনার গীতকাব্য তুলে দিলেন দিশাহীন নিশাকে। অনুসন্ধিৎসু চোখে উপদেশবাণীও বর্ষণ করলেন। যেন এই বঙ্গবাসীর বেঁচে থাকা, জীবনযাপন, মঙ্গল ও কল্যাণময় করার উদগ্র আগ্রহ তাদের একান্তই। আর সেই সুবাদে সুরমামাখা চোখে স্বপ্ন তুলে দিয়ে গেলেন। যা আসলে দুঃস্বপ্নেরই নামান্তর। বিদেশিনীকে ‘ত্রাতা’ সাজিয়ে তার কাছেই তুলে ধরা হলো নালিশ। পেশ করা হলো নথিপত্র। স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশীকে আগ্রহী করে তুলেছেন যাঁরা, তাঁরা কী চান? তাঁরা চান অস্থিতিশীলতা, জঙ্গীবাদের প্রসার, দেশের সম্পদ লুটপাটের সুযোগ, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষের বিনাশ, জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি করে পানি ঘোলা করে তা থেকে মৎস্য আহরণ। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশীয়বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি। নিশা দেশাই বিসওয়াল। নেপালে সার্ক সম্মেলনে অতিথি হিসেবে যোগদান শেষে সরকারী আমন্ত্রণ ছাড়াই ঢাকায় ঘুরে গেলেন। তবে কোন ‘সাইট সিয়িং’য়ের জন্য নয়, এসেছেন ভ্রান্ত পথিকদের আরও ভ্রান্তির বেড়াজালে প্রবিষ্ট করিয়ে তাদের যেনতেন প্রকারে ক্ষমতার অলিন্দে ঠাঁই দিতে। আর তাকেই ভাগ্য বিধাতা মেনে দেশের একদা ক্ষমতাসীন দলটি সালিশনামা তুলে ধরেছেন। নথিপত্রসহ বিবরণী শুধু নয়, পত্রও দিয়েছেন তাঁকে। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা দলের নেতা-নেত্রীরা ভিনদেশী প্রভুর কাছে নতজানু ভঙ্গিতে পেশ করলেন নানা দাবি-দাওয়া। যেন তারাই ভাগ্য নিয়ন্তা, তারাই দেবে পথ, ক্ষমতার মসনদে যাবার। নিশার তাই আকুলতা-ব্যাকুলতা ঝরে ঝরে পড়েছে, পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে। অথচ জানাই আছে তার, পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচনের বিধান সংবিধানজুড়ে। আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন কোনটাই জনগণের দাবি নয়। বরং জনগণ চায় শান্তি, স্বস্তি, নিরুপদ্রব জীবন। আর বিদ্যমান যা এই সময়জুড়ে দেশব্যাপী। তারা চায় না সংঘাত, চায় স্থিতিশীলতা। চায় নির্বিঘেœ দু’বেলা দু’মুঠোর যোগাড়। অতীতের সহিংসতা চায় না। তাই নিশার স্বপন নিয়ে যাঁরা দিনরাত গুজরান করছেন, তাঁদের সেই স্বপ্ন কাঁচের টুকরো হয়ে বিঁধবে নিজেদেরই পায়ে। নিশার প্রেসক্রিপশনে রোগ সারানো সম্ভব নয়। বরং তাতে সংক্রামক ব্যাধির বিস্তারই ঘটবে। নিশার স্বপন তাই নিশিরাতের আঁধারে মিলিয়ে যেতে বাধ্য।
×