ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উপ-সম্পাদকীয়

রেলের উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

রেলের উন্নয়ন

রেল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে উপযোগী, নিরাপদ ও জনপ্রিয় পরিবহন ব্যবস্থা। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে পরিকল্পিতভাবে রেলের একটি সুন্দর অবকাঠামো গড়ে উঠেছিল। বস্তুত তৎকালীন যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেল বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল। মানুষের জীবন, রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, সামাজিক সম্পর্ক প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইতিবাচক উন্নয়নে রেলের ভূমিকা অপরিসীম। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে মাত্র দু-তিন বছর সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালে বিধ্বস্ত বিপুল সংখ্যক রেলসেতু ও রেলপথ পুনর্নির্মিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের পর রেলের উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে। বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। পরবর্তী কয়েক দশক ধরে বিদেশী সহায়তায় এখানে বিপুল সংখ্যক সড়ক নির্মিত হয়েছে। কিন্তু রেল ব্যবস্থা অবহেলার শিকার হয়েছে। পরবর্তী প্রায় সব সরকারের আমলে রেলে অবহেলার এ ধারা অব্যাহত ছিল। বস্তুত রেল ব্যবস্থা সম্প্রসারণের বদলে বরং সঙ্কুচিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার রেলের উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে। গত কয়েক বছর ধরে রেলের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছিল। তার বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে রেল যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ক্ষেত্র থেকে দুর্নীতি ও অব্যবস্থার অবসানের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। বিদেশ থেকে আমদানি করা ‘ডেমুট্রেন’ বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। রেলের বিষয়ে জনগণের অভিযোগের সীমা নেই। রেলের হাজার হাজার কোটি টাকার জমি এখনও দখলে। রেলের জমিকে দখলদারমুক্ত করতে হবে। সরকার রেলের উন্নয়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। চারটি পর্যায়ে এ মহাপরিকল্পনায় ২৩৫টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এ মহাপরিকল্পনা বিষয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা জরুরী। প্রতিটি প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আবশ্যক। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথকে ডবল লাইনে উন্নীত করার কাজ চলছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু রেলপথকে ডবল লাইনে উন্নীত করা দরকার। সেই সঙ্গে বন্ধ হওয়া বিপুল সংখ্যক রেলস্টেশন সংস্কারের পর আবার চালু করার কথা ভাবতে হবে। উপযোগী পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে রেলের সম্ভাবনা অসীম। তাই রাজধানীর আশপাশের এলাকাগুলোকে রেল ব্যবস্থায় সংযুক্ত করা হলে বহু লোক অল্প সময়ে ঢাকা আসতে পারবে। ঢাকার লোকসংখ্যার চাপ কমবে ।
×