ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কিংস কাপ ফুটবল ফাইনালে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ১- গোলে হারাল পুনে এফসিকে

শিরোপা জিতে শেখ জামালের ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

শিরোপা জিতে শেখ জামালের ইতিহাস

রুমেল খান ॥ বিজয়ের মাসে দেশের বাইরে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়, নাকি সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের কোন ক্লাব হিসেবে প্রথম বারের মতো অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়াÑ কোনটা বড়? সে যাই হোক না কেন, মধুর সত্যিটা হচ্ছে ‘কিংস কাপ’-এর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মঙ্গলবার লেখা হয়েছে শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডের নামটি। যা বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমীদের জন্য বড়ই আনন্দের বিষয়। ভুটানের চানগ্লিমিথাং স্টেডিয়ামে কিংস কাপের ফাইনালে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে ইয়াসিন খানের গোলে ভারতীয় প্রতিপক্ষ পুনে এফসিকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপাটা নিজেদের করে নিয়েছে মনজুর কাদের-মারুফুল হকের দল। যেকোন টুর্নামেন্টে এবারই প্রথম পুনে এফসির মুখোমুখি হলো জামাল। মজার ব্যাপারÑ এই টুর্নামেন্টে কিন্তু খেলারই কথা ছিল না পুনের! থাইল্যান্ডের ওসোতস্পা ক্লাব টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নাম প্রত্যাহার করে নেয়। তখন তাদের পরিবর্তে খেলার সুযোগ পায় পুনে। এ টুর্নামেন্টে এবারই প্রথম অংশ নেয় জামাল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই ভুটান যায় তারা। প্রথমবার অংশ নিয়েই অভূতপূর্ব সাফল্য উপহার দেয় জামাল। জামালের কৃতিত্ব হচ্ছে ভারতের প্রতিটি দলকেই তারা এবার হারিয়েছে বলে-কয়ে! এর মাধ্যমে সাফ অঞ্চলে নতুন শক্তিশালী ফুটবল ক্লাব হিসেবে নিজেদের নামটি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হলো শেখ জামাল। তাছাড়া এ শিরোপজয়ের মাধ্যমে আরও দুটো লাভ হলো তাদের। সেটা হচ্ছে দেশের মৌসুম-সূচক ঘরোয়া আসর ‘ফেডারেশন কাপ’ এবং ‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’-এর জন্য ভালমতোই নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারলো তারা। কিংস কাপের শিরোপা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিল নিঃসন্দেহে। এই টুর্নামেন্টে যখন অংশ নেয়, তখন জামালের টাগের্ট ছিল দুটিÑ কঠিন প্রতিপক্ষ মোহনবাগানকে হারানো এবং শিরোপা জেতা। দুটি টার্গেটই পূরণ হয়েছে। দেশের মান-মর্যাদা রাখতে সক্ষম হয়েছে জামাল। ‘ফাইনালে জিতলে ছেলেদের জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।’ বলেছিলেন মনজুর কাদের, শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি, বিশিষ্ট ফুটবল সংগঠক। দলকে উজ্জীবিত করার জন্য সবকিছুই করেন। করেন না কোন কার্পণ্য। মঙ্গলবার ম্যাচ শুরুর আগেই মনজুর কাদের দলের প্লেয়ারদের উজ্জীবিত করতে উপহার দেন ১০ হাজার ডলার পুরস্কার। খেলোয়াড়রা জানবাজি লাগিয়ে খেলে নিরাশ করেননি তাঁকে। ম্যাচে উভয় দলই এ্যাটাকিং ফুটবল খেলে। একেবারে যাকে বলে ‘হাড্ডহাড্ডি ফুটবল।’ দু’দলই একাধিক গোলের সুযোগ নষ্ট করে। তবে ২৫ মিনিটে প্রাপ্ত সুযোগ কড়ায়-গ-ায় কাজে লাগায় শেখ জামাল। ম্যাচের তখন ২৫ মিনিট। কর্নার পায় জামাল। কর্নার কিক করেন জামালের হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড ওয়েডসন এ্যানসেলমে। তার কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে পুনের গোলরক্ষক অমৃন্দর সিংকে পরাস্ত করে দলকে এনে দেন অনাবিল আনন্দের উপলক্ষ্য (১-০)। ম্যাচের শেষদিকে জামালের ডিফেন্ডার রায়হান হাসান দারুণ বকে সেভ করে দলকে বাঁচান। ইনজুরি টাইমে মিডফিল্ডার জামাল ভুঁইয়া লাল কার্ড পেয়ে বহিস্কৃত হলে দারুণ চাপে পড়ে যায় শেখ জামাল। এছাড়া গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড ল্যান্ডিং ডার্বোয়ে এবং গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম পান হলুদ কার্ড। এই সুযোগে জামালের ওপর আক্রমণের বন্যা বইয়ে দেয় পুনে। কিন্তু জামালের রক্ষণপ্রাচীর কোনভাবেই ভেদ করতে পারেনি পুনে। রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে ‘যুদ্ধ’ জয়ের আনন্দে ফেটে পড়ে জামাল শিবির। এই টুর্নামেন্টে সেমিতে আসতে জামালের ম্যাচগুলো ছিল এরকমÑ ভুটানের ড্রুক ইউনাইটেড ক্লাবকে ৩-০ গোলে হারায়, থাই ক্লাব নাখোন রাতচাসিং মাজদার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে ও ভারতের মোহনবাগানের বিপক্ষে ৫-৩ গোলের জয়। সেমিতে নেপালের মানাং মার্শিংয়াদী ক্লাবকে ২-১ গোলে হারানো। এ টুর্নামেন্টে গত আসরে বাংলাদেশের দুই ক্লাব টিম বিজেএমসি ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ অংশ নিয়েছিল। দুই দলই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। এবার জামালের সঙ্গে ঢাকা আবাহনীও অংশ নেয় ভুটানের কিংস কাপে। তারাও বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে। ২০১০ সালে ধানম-ি ক্লাবটি শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব নামে আত্মপ্রকাশ করে। তারা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। ২০১৩ সালে আটবারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে হারিয়ে ফেডারেশন কাপ জয় করে ক্লাবটি। ২০১০ সাল থেকে টানা চার বছর ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলে তারা। দেশের বাইরে নেপালে ২০০০ সালে ক্লাব বুদ্ধ সুব্বা গোল্ডকাপ জয় করে। ২০১১ সালে নেপালে সাফাল পোখারা কাপ টুর্নামেন্টের ফাইনালে শেখ জামাল নেপাল আর্মিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৪ সালে ভারতের কলকাতায় আইএফএ শিল্ড কাপের ফাইনালে উঠে শেখ জামাল। ফাইনালে কলকাতা মোহামেডানের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়। আর কিংস কাপে হলো চ্যাম্পিয়ন। কিংস কাপের সুদৃশ্য ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরে তাতে চুমু খাবার সৌভাগ্য অর্জন করলেন অধিনায়ক নাসির। এ আসরের স্মৃতি অনেকদিন হৃদয়ে জাগ্রত হয়ে থাকবে বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমীদের কাছে।
×