ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্রের লড়াই খুব কঠিন, সফল হতে সময় লাগবে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

গণতন্ত্রের লড়াই খুব কঠিন, সফল হতে সময় লাগবে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগে দ্রুত সরকার পতনের কথা বললেও এখন অবস্থান পরিবর্তন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক ফোরাম’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত ‘উন্নয়নের পূর্বশর্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই খুব কঠিন লড়াই। বর্তমান সরকার বন্দুকের জোরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। তাই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী মানুষের লড়াই সফল হতে সময় লাগবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, দেশে যতবার সামরিক শাসন জারি হয়েছে ততবারই আওয়ামী লীগের কারণেই হয়েছে। ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করে বিএনপি দেশে সামরিক শাসন আনতে চেয়েছিল’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, এই বক্তব্য মানুষকে বোকা বানানো বা প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। এটা সত্যের অপলাপ মাত্র। বিএনপি কখনই সামরিক শাসনে বিশ্বাস করে না। আর জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করেননি। সামরিক শাসন জারি করেছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। তিনি বলেন, এরশাদ যখন সামরিক শাসন জারি করেছিলেন তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আই এ্যাম নট আনহ্যাপি’। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না গিয়ে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার এনেছিল। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বলেছেন, মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সেই সামরিক শাসন আপনারা আনতে চেয়েছিলেন তাই সেটা আপনাদের জন্য জায়েজ ছিল। ফখরুল বলেন, দেশে এখন যারা ক্ষমতায় আছে, তারা গণতন্ত্রের সব সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছে। উন্নয়নের প্রথম শর্ত হচ্ছে গণতন্ত্র। কিন্তু তারা বলছে, উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রের প্রয়োজন নেই। তারা যে গণতন্ত্রের কথা প্রচার করছে তা রেজিমেন্টটেড গণতন্ত্র। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র। নির্দলীয় সরকারের জন্য চলমান সংগ্রামকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য জনগণের সংগ্রাম ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র টিকবে না। তবে জনগণ বিজয়ী হবেই। জনগণ লড়াই করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার র‌্যাব-পুলিশের উপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। এখন র‌্যাব-পুলিশ দেশ চালাচ্ছে। হাজার হাজার পুলিশ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা জনগণের কোন কাজে আসছে না। পুলিশ বাহিনীকে সরকারবিরোধী দল দমনে কাজে লাগাচ্ছে। তাই পুলিশের কোন জবাবদিহিতা নেই। পুলিশ দুর্নীতি ও লুটপাটে ব্যস্ত। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই তারা দেশকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে। আওয়ামী লীগের দাম্ভিকতা-অহমিকায় বোঝা যায় দেশটা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। যারা বলেন সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে তারা হতাশায় ভোগেন। আমরা অবশ্যই দেশের ১৬ কোটি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছি। এ আন্দোলনে আমরা সফল হবই। ফখরুল বলেন, নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র হয় না। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় সে সরকার গণতান্ত্রিক সরকার। ক্ষমতাসীনরা সব কিছুর সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছে। তারা গণতন্ত্র বলতে বোঝে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আবার ক্ষমতায় থাকা। আর তারা উন্নয়ন বলতে যা বোঝে তা হলো আওয়ামী লীগের উন্নয়ন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এইচ এম হারিছুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নবী উল্লাহ নবী, নরসিংদী এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর এলাহী, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন, এ্যাডভোকেট কানিজ ফাতেমা প্রমুখ।
×