ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর হতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর হতে যাচ্ছে

সুমি খান ॥ অবশেষে ভারত-বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর হতে যাচ্ছে। ছিটমহলবাসী ৫১ হাজার মানুষ এতদিনে তাদের আত্মপরিচয় ফিরে পাবে। ভারত-বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত চুক্তি সংশোধনের ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদি তাঁর সরকারের সদিচ্ছার কথা প্রকাশের একদিন পরই সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি ভারতের লোকসভায় জানাল কোন রকম সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুততার সঙ্গে যেন এই চুক্তির বিল পাস করা হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ১৭ হাজার ১শ’ ৬০ একর এলাকার ১১টি ছিটমহল ফিরিয়ে দেবে ভারত এবং ভারতের ৭ হাজার ১শ’ ১০ একরের ৫১টি ছিটমহল বাংলাদেশের থেকে ফিরিয়ে নেবে। এর মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি ভারতের সংসদে অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গেল। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সংবিধানে ১১৯তম সংশোধন বিল পাস হয় ২০১৩ সালে। পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে ২০১১ সালে যে সংশোধিত চুক্তি হয়, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে দুই দেশের সংসদে পাস করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান বিজেপি সরকার এই চুক্তি অনুমোদনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলে জানালেন সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধান কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২৫ নবেম্বর এই বিলটি সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করেছে এবং সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব এই বিল পেশ করার পরামর্শ দিয়েছে। ওই কমিটির একাধিক সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই বিলটি পাস হয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে সংসদের এই স্ট্যান্ডিং কমিটিতে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সুগতা বোস, বিজেপির অনন্তকুমার হেজ এবং বরুণ গান্ধী। কমিটির সদস্যরা সংসদে বলেছেন, তাদের জাতীয় স্বার্থেই বাংলাদেশের সঙ্গে এই সীমান্ত চুক্তির বিল পাস করতে হবে। ভারতের অসম, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গী, সন্ত্রাসী এবং চোরাচালান চক্র নিয়ন্ত্রণে এই চুক্তির অনুমোদন এবং কার্যকর করা জরুরী বলেছেন নরেন্দ্র মোদি। ভারত বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি গত বছর ভারতের রাজ্যসভায় পেশ করার পরই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল স্ট্যান্ডিং কমিটির বিবেচনার জন্য। ভারতীয় সংসদে বহুদিন ধরে মূলত বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস ও অসম গণপরিষদের বাধার কারণে এই বিলটি পাস করানো যাচ্ছিল না। ছ’মাস আগে বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজেপি এই বিল নিয়ে তাদের বিরোধিতা প্রত্যাহার করে নেয়। এখন তৃণমূলও তাদের সুর নরম করেছে, আর অসম গণপরিষদের কোন সদস্য এই সংসদে নেই। তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিও সম্প্রতি বলেছেন, ছিটমহলবাসীরা চাইলে ও উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হলে এই বিল নিয়ে তারও আপত্তি নেই। বাংলাদেশের সংসদ এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। ভারতের দিক থেকে এই শেষ ধাপটি পেরোনোর পরই শুরু হবে চুক্তি বাস্তবায়ন তথা ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া। এর ফলে ভারতের নাগরিকরা তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পাবে, বাংলাদেশের নাগরিকরা তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পাবে।
×