ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিষেকে বিশ্বরেকর্ড গড়ে অভিভূত তাইজুল

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

অভিষেকে বিশ্বরেকর্ড গড়ে অভিভূত তাইজুল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ অভিষেকেই বিরল অর্জন। যেনতেন কিছু নয়, একেবারে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ক্রিকেট বিশ্বকে নিজের আগমন ধ্বনি শুনিয়ে দিয়েছেন। আর এমন বিস্ময়ের জন্মই দিয়েছেন জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডেতে অভিষেক হওয়া তরুণ স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৪৩ বছরের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে কোন বোলারই আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে যাত্রা শুরুর ম্যাচে হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। কিন্তু ২২ বছর বয়সী উদীয়মান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল সেটাই করেছেন। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ২৭তম ওভারের শেষ বলে টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড, ২৯তম ওভারের প্রথম বলে জন নিয়ুম্বুকে এলবিডব্লিউ ও পরের বলে টেন্ডাই চাতারাকে বোল্ড করে ত্রিভুজ পূর্ণ করে হ্যাটট্রিকের স্বাদ নেন। আজ পর্যন্ত বিশ্বে যত ভয়ঙ্কর বোলার এসেছেন এবং ১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ওয়ানডের যাত্রা শুরু হওয়ার পর এর আগে ৩৫ বার হ্যাটট্রিক দেখেছে বিশ্ববাসী। বিশ্বের ৩২তম আর বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে ৩৬তম হ্যাটট্রিক করলেন তাইজুল। তবে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের ঘটনা এই প্রথম। যা করতে পারেননি মুত্তিয়া মুরালিধরন, শেন ওয়ার্ন, আব্দুল কাদির, সাকলাইন মুস্তাক, বিষেণ সিং বেদী ও অনিল কুম্বলেদের মতো বিশ্ব কাঁপানো স্পিনাররাও। সবাইকে পেছনে ফেলে ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় রচনা করলেন নাটোরের এ উদীয়মান বোলার। আর এমনটা করতে পেরে দারুণ খুশি তিনি। জানিয়েছেন দলে টিকে থাকার জন্য সব ধরনের চ্যালেঞ্জই মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছেন। তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করে জানিয়েছেন সব ফরমেটেই একইভাবে নৈপুণ্য দেখিয়ে দলে টিকে থাকতে পারবেন। চতুর্থ ওয়ানডেতেই দলে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন ৫ টেস্টে ২৫ উইকেট শিকার করা তাইজুল। কিন্তু লেগস্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন আর আরাফাত সানির কারণে একাদশে আর খেলা হচ্ছিল না। তাছাড়া প্রতিপক্ষের জন্য মূর্তমান আতঙ্ক সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি বলতো আছেই। পঞ্চম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হওয়ার দিনে প্রথম সুযোগটা পেয়েই করলেন হ্যাটট্রিক। ৭ ওভারে দুই মেডেনসহ ১১ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসে অভিষেক ম্যাচে স্পিনারদের মধ্যে বিশ্বসেরা বোলিংয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বিষয়টা আগেই জানিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহীমসহ দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা। এ বিষয়ে তাইজুল বলেন,‘হ্যাটট্রিক পূর্ণ হওয়ার আগেই আমি জেনেছি। সিনিয়র ক্রিকেটাররা আমাকে এসে বলছিলেন যে একটা রেকর্ড হবে। সেটা করতে পেরে অবশ্যই অনেক ভাল লাগছে।’ হ্যাটট্রিক বলটি করার সময় মুশফিক নিজে এসে তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন। এ বিষয়ে তাইজুল বলেন, ‘মুশফিক ভাই বললেন লাইনে বল ফেলতে। তিনি আমাকে বলেন আগে যেভাবে ঠিক জায়গায় বল ফেলেছি সেভাবে করতে পারলেই হবে।’ ওয়ানডে সিরিজের একেবারে শেষ ম্যাচে অভিষেক হয়েছে। মাত্র ৫ টেস্টে ২৫ উইকেট শিকার করে তাইজুল মূলত হয়ে উঠেছেন দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচের জন্য বিশেষজ্ঞ। তবে তাইজুল বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস ছিল সুযোগ পেলে ভাল কিছু করব। আমার মনে হয় যেকোন ফরমেটেই আমি এভাবে ভাল করে দলে নিয়মিত খেলতে পারব। সেজন্য আমার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসও আছে।’ তবে বাংলাদেশ দল বাঁহাতি স্পিনারের ঘাঁটি। কতদিন নিজেকে দলে নিয়মিত সদস্য হিসেবে টিকিয়ে রাখতে পারবেন তিনি? এ বিষয়ে তাইজুল বলেন, ‘ক্রিকেট খেলাটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এখানে ভাল করেই টিকে থাকতে হবে। আমার বিশ্বাস আছে আমি সেটা করেই টিকে থাকতে পারব।’ বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে চতুর্থ হ্যাটট্রিক করেছেন তাইজুল। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন শাহাদাত হোসেন রাজিব। তিনি ২০০৬ সালের ২ আগস্ট এই জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেই হারারেতে ২০০৬ সালের ২ আগস্ট। এরপর ২০১০ সালের ৩ ডিসেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে রাজ্জাক এবং গত বছর ২৯ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে রুবেল হ্যাটট্রিক করেন।
×