ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের বড় ধরনের সহায়তা বছরের শুরুতেই

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

বিশ্বব্যাংকের বড় ধরনের সহায়তা বছরের শুরুতেই

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বছরের শুরুতেই বড় ধরনের সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। জানুয়ারি মাসেই চুক্তি হতে যাচ্ছে ১১১ কোটি মার্কিন ডলারের, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে বোঝাপড়াসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ফলে চলতি অর্থবছরে সংস্থাটির কাছ থেকে যে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে তা পূরণ হতে কোন সমস্যা হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ ছাড় করার পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও অন্য দাতাদের চেয়ে বেশি ছাড় করেছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক ডেস্কের প্রধান কাজী শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে সহযোগিতা দিন দিন বাড়াচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম কয়েকমাস চুক্তি স্বাক্ষর না হলেও জানুয়ারিতে কয়েকটি প্রকল্পে বড় ধরনের ঋণ চুক্তি করতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া ডিসেম্বরেও একটি চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে। এর মাধ্যমে সংস্থাটি থেকে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে যাব। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইডা থেকে সবচেয়ে সহজশর্তে ঋণ পাওয়া যায়, যা অন্য কোন দাতা সংস্থা এত সহজশর্তে আর্থিক সহযোগিতা দেয় না। জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে ৪০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী-৩ (পিইডিপি-৩) বাস্তবায়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। অতিরিক্ত অর্থায়ন হিসেবে সংস্থাটি এ টাকা দিচ্ছে। মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার সেল্টার নির্মাণ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জানমাল রক্ষায় শেল্টার তৈরি করা হবে। এগুলো অন্য সময় স্কুল হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে। ইনকাম সাপোর্ট ফর দ্য পুওরেস্ট প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অসহায় দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আয়বর্ধনমূলক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। যাতে তারা আর্থিকভাবে সচ্ছলতা লাভ করতে পারে। রেভিনিউ মবিলাইজেশন প্রোগ্রাম ফর রিজাল্টস ভ্যাট ইম্পিøমেনটেশন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ৬ কোটি ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পগুলোর বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব জনকণ্ঠকে বলেন, দুই-তিন মাস আগে রেভিনিউ মবিলাইজেশন প্রোগ্রাম ফর রিজাল্টস ভ্যাট ইম্পিøমেনটেশন প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক বোর্ড। তাই ডিসেম্বরের মধ্যেই এটির চুক্তি হয়ে যাবে। বাকি প্রকল্পগুলো এখনও বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদন দেয়া হয়নি। তবে আশা করছি ডিসেম্বরের যে কোন সময় বোর্ডে অনুমোদন পাবে। সরকার চাইলে জানুয়ারির মধ্যেই চুক্তি করা সম্ভব হবে। ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অর্থবছরের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন প্রতিশ্রুতি দেয়নি সংস্থাটি। তবে যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা অর্থবছর শেষে পূরণ হবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানিয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরে সব দাতার প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে এরচেয়েও বেশি অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করছে ইআরডি। বিশ্বব্যাংকের ঋণের সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ১০ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ আগামী ৪০ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। চার মাসে অর্থ ছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ॥ চলতি অর্থবছরের (২০১৪-১৫) প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত দাতারা যে পরিমাণ অর্থ ছাড় করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রধান অর্থ ছাড়কারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সংস্থাটি ছাড় করেছে ১৫ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ছাড় করেছে চৌদ্দ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ছাড় করেছে চার কোটি সাত লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার এবং ইফাদ ছাড় করেছে ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাংকের অর্থ ছাড়ে রেকর্ড গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। এক যৌথ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৯৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার ছাড় করেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থ ছাড়ের পরিমাণ গত চার বছর ধরেই বাড়ছে এবং অর্থ ছাড় বাড়ার এ ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রতি ছয় মাস অন্তর নির্দিষ্ট প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। সংস্থাটি বলছে, উন্নয়ন প্রকল্পে গতিসঞ্চার এবং অর্থ ছাড় বাড়াতে তারা সচেষ্ট। বিশ্বব্যাংকের ঢাকার কার্যালয়ের অপারেশন্স এ্যাডভাইজার ক্রিস্টিন কিমস বলেন, ‘প্রকল্পের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হওয়া ও সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি ভাল উপায় হচ্ছে প্রকল্প পর্যালোচনা। প্রতিশ্রুতি আদায়ে তৎপরতা উন্নয়নে দাতাদের প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা বাড়াচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই সংস্থাটি সংশ্লিষ্ট উইংগুলোকে তাদের কর্মতৎপড়তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট উইংগুলোকে নিয়ে এক বৈঠকে এ নির্দেশ দেয়া হয় বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ইআরডির ফাবা উইংয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে দাতাদের প্রতিশ্রুতি বাড়ানোর বিষয়ে বেশ কয়েকটি সমস্যা আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ঋণ গ্রহণে আইন মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স (অনাপত্তি) বিষয়টি অন্যতম। বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে আইনী জটিলতা আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হলে দ্রুত এর কোন জবাব পাওয়া যায় না। এজন্য অনেক সময় ঋণ চুক্তি সম্পাদনে দেরি হয়। তাছাড়া বৈঠকে প্রতিশ্রুতির লক্ষ্য অর্জনে দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে নেগোশিয়েশন বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
×