ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মংলাবন্দরে জাহাজের কারিগরি পরীক্ষা বন্ধ তিন বছর

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

মংলাবন্দরে জাহাজের কারিগরি পরীক্ষা বন্ধ তিন বছর

আহসান হাবিব হাসান, মংলা থেকে ॥ প্রায় তিন বছর ধরে মংলাবন্দরে আসা জাহাজগুলোর কারিগরি পরীক্ষা বন্ধ। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় এ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে যত্রতত্র ছাড়পত্র পাচ্ছে বন্দরে আসা জাহাজগুলো। এতে নিষিদ্ধ জাহাজগুলো তথ্য গোপন করে অনায়াসেই বন্দরে প্রবেশ করছে। এ জন্য মংলাবন্দর এখন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে। জানা গেছে, গত প্রায় তিন বছরে ৮২০টি জাহাজ কারিগরি পরীক্ষা ছাড়াই এ বন্দরে প্রবেশ করে। পরীক্ষা না হওয়ায় আদায় হয়নি ৮২ লাখ টাকার রাজস্ব। বন্দর ও শুল্ক বিভাগের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য অনেক জাহাজের আয়তন ও ধারণক্ষমতা কম দেখানো হয়। চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর এক হাজার টন সিমেন্ট বোঝাই ‘এভি হাজী-১’ নামের একটি অভ্যন্তরীণ কার্গো জাহাজ মংলাবন্দরে প্রবেশ করে। অথচ বন্দর সীমানায় অভ্যন্তরীণ জাহাজ প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু ঘোষণাপত্রে এমভি হাজী-১ কে সমুদ্রগামী জাহাজ হিসেবে দেখানো হয়। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর পানামা পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি সিনো গ্রেস’-এর প্রকৃত তথ্য গোপন এবং আয়তন কম দেখিয়ে মংলায় প্রবেশ করে। পরে পরিমাপ করে এর আয়তন অনেক বেশি পাওয়া যায়। এদিকে সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল আইন ‘মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স (এমএসও)- ১৯৮৩’ অনুযায়ী সমুদ্রবন্দরে জাহাজ প্রবেশ ও ছাড়ার আগে জাহাজটির নিরাপত্তা সংক্রান্ত এনওসি বা ছাড়পত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বন্দরের নিরাপত্তার স্বার্থে জাহাজটি ঝুঁকিমুক্ত কিংবা নিরাপদ কিনা তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এ ব্যবস্থা। এনওসি বাবদ প্রতিটি জাহাজের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়ে থাকে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ‘পোর্ট স্টেট কন্ট্রোল’ বা পিএসসির আওতায় নৌবাণিজ্য অফিসের একজন কারিগরি বিশেষজ্ঞ (প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক/ নটিক্যাল সার্ভেয়ার) এই দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এখানকার নৌবাণিজ্য অফিসে কোন কর্মকর্তা নেই বলে জানা গেছে। মংলাবন্দর নৌবাণিজ্য অফিসে কোন কর্মকর্তা না থাকায় একজন নিম্নমান সহকারী আবুল খায়ের শুধু জাহাজের নাম-ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করে অনাপত্তির সনদ বা ছাড়পত্র দিচ্ছেন। কারিগরি পরীক্ষা না করার কারণে জাহাজগুলোর কাছ থেকে রাজস্বও আদায় করা হচ্ছে না। ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে বন্দরটি। ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৪ মাসে এখানে আসা জাহাজের সংখ্যা ৮২০। এর মধ্যে চলতি বছরের ১০ মাসে ৩১৫টি, ২০১৩ সালে ৩০৩টি এবং ২০১২ সালে ২০২টি জাহাজ এসেছে। জাহাজ প্রতি ১০ হাজার টাকা হিসেবে ৮২০টি জাহাজের বিপরীতে সরকার ৮২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা। কিন্তু সরকার এ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ও মহাপরিচালকের সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্ত এ কে এম ফখরুল ইসলাম জানান, মহাপরিচালক সরকারী সফরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল বিষয় তদারকি করেন। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল সম্পর্কে অফিসিয়ালী কিছু বলা তার এখতিয়ার-বহির্ভূত বলেও জানান তিনি।
×